তিন টাকার ডিম নিয়ে লঙ্কাকান্ড

তিন টাকার ডিম কিনতে সকাল ৮টার আগেই জনসমুদ্র খামার বাড়ি

আট টাকার ডিম পাওয়া যাবে মাত্র তিন টাকা পিস। শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবসে প্রচারণার জন্য এমন ঘোষণাই দিয়েছিল বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেই অনুসারে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়।

ঘোষণা ছিল বিশ্ব ডিম দিবসে ঢাকার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে ডিম বিক্রি হবে। একজন ক্রেতা কিনতে পারবেন সর্বোচ্চ ৯০টি ডিম। এই ঘোষনায় যে এমন কান্ড হবে তো বুঝতেও পারেননি আয়োজকরা।

শুক্রবার সকাল ৮টার মধ্যেই কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সকাল ৯টার দিকে ক্রেতাদের লাইন বিজয় সরণি পার হয়ে যায় ডিম কিনতে আসা মানুষদের ভিরে।

নানা বয়সের, নানা পেশার মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম কিনতে জড়ো হন খামার বাড়িতে। কারো হাতে বালতি; কারও হাতে ছিল ডিম রাখার খালি খাঁচি।

কিন্তু ভিড়ের চাপ আর অব্যবস্থাপনার কারণে বিশৃঙ্খলা, পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে হাতাহাতি, পুলিশের লাঠিপেটা আর বিক্ষোভের মধ্যে সকাল ১০টার আগেই পণ্ড হয়ে যায় তিন টাকায় ডিম বিক্রির প্রচারাভিযান।
ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কিতে কেআইবি মিলনায়তনের বাইরে খালি জায়গায় ডিম বিক্রির জন্য বানানো প্যান্ডেল ভেঙে যায়। ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় কাউন্টারে রাখা বেশ কিছু ডিম।

আয়োজকদের মুখপাত্র বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় জানান, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য এক লাখ ডিম এনেছিলেন তারা। সকাল ১০টায় বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও মানুষের ভিড় দেখে ৯টার দিকেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়।

কিন্তু এত মানুষের চাপে আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে ১০টা বাজার আগেই ডিম বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

মানুষের ভিরের এই বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছেন আযোজকতের অন্যতম বিশ্বজিৎ রায়। বলেন,
“মানুষ এত অভূতপূর্ব সাড়া দেবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমরা দুঃখিত। তবে ব্যর্থ হয়েছি তা বলব না,”।
তিন টাকার ডিম কেনার সৌভাগ্য হয়েছে খুব কম মানুষেরই। বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার আগে ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় কাউন্টারে রাখা বেশ কিছু ডিম ।

ডিম কিনতে আসা মানুষের ভিরে ডিমই ভেঙে যায়

পরে কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান ফেইসবুকে এক বিবৃতিতে বলেন, “ডিম দিবস উপলক্ষে আমরা সাধারণ মানুষকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছি- তা হল ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য এবং সকলেরই ডিম খাওয়া দরকার। আমরা চেয়েছিলাম সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা যেন কম দামে পরিবারের জন্য এক মাসের ডিম কিনে নিয়ে যেতে পারেন।”
‘বিশৃঙ্খলার কারণে’ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিম বিক্রি করতে না পারলেও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন মসিউর। তিনি বলেছেন, আগামীতে আলোচনা সাপেক্ষে আবারও কম দামে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

এই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ পরিস্থিতির জন্য আয়োজকরা ‘আন্তরিকভাবে দুঃখিত’ বলে দায় সারতে চাইলেও খালি হাতে বাড়ি ফেরার আগে খামারবাড়ি মোড় থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত সড়কে এলোমেলো অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের সামনের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ।