রোহিঙ্গারা এখনো শরণার্থী নয়, অনুপ্রবেশকারি: ত্রাণ সচিব শাহ কামাল

রাখাইন থেকৈ পালিয়ে আসা এক নারী বাংলাদেশে হয়েছেন মা

মিয়ানমারের রাখাইনের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারী বলে জানিয়েছেন সরকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যদি দেখা যায়, বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি তখন তাদের শরণার্থী ভাবার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না এ রকম প্রশ্নের উত্তরে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সচিব এ কথা জানান। সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে এরা অনুপ্রবেশকারী।

“কারণ এটা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে, এই আলোচনার পর যদি দেখা যায় এটা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তখনই বিষয়টি বিবেচনায় আসবে। এখন কিন্তু (বিবেচনায়) আসার সময় হয়নি।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা সময়ের ব্যাপার। এই যে আসছে..এতগুলো লোক, আমরা কি তাদের… সময় অনেক কিছু বলে দেবে, আমরা আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতা চাই।”

মন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, এরা মিয়ানমারের নাগরিক, এদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে, এই সমস্যা মিয়ানমারের, এই সমস্যা তাদের সমাধান করতে হবে।”

শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে কোনো দেশকে উদ্বাস্তুদের বেশ ‍কিছু অধিকার দিতে হয়।

অন্য এক প্রশ্নে সচিব শাহ কামাল জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে জন্ম সনদ দেওয়া হচ্ছে । ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “তাদের কোনো নাগরিকত্ব বাংলাদেশ দিচ্ছে না। শুধুমাত্র বার্থ রেজিস্ট্রেশনটা দিচ্ছে, ওখানে লেখা হচ্ছে এরা মিয়ানমারের নাগরিক।”

এখন পর্যন্ত এসেছে সাড়ে ৪ লাখ

গত এক মাসে সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানান মন্ত্রী মায়া।
তিনি বলেন, “এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলাম না, মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলা চলে। বন্যা না যেতে এই ধরনের সমস্যা আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ অগাস্ট সহিংসতা শুরুর পর বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে।

মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। তবে যাচাই সাপেক্ষে তাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ায় থাকলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে দেরি হলে তাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী মায়া।

এক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব কাজকে সুষ্ঠুভাবে করতে অভিজ্ঞ ও ইউএন এজেন্সিগুলোকে নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।”

রাস্তা তৈরিতে ইউএনএইচসিআরের ৩৫ কোটি টাকা

রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আবাস নির্মাণে সরকার দুই হাজার একর জায়গা চিহ্নিত করলেও সেখানে যাতায়াতে জন্য নতুন করে রাস্তা তৈরিতে ৩৫ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে ত্রাণমন্ত্রী মায়া জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রাস্তা করতে ৩৫ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। সেখানে তারা (ইউএনএইচসিআর) আশ্বস্ত করেছেন, এই টাকা তারা দেবেন, আগামীকালই এই টাকা পেয়ে যাব।”

সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই রাস্তাটি করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন ক্যাম্পে ‘শেল্টার’ নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে মায়া বলেন, “স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ যে পর্যায়ে রয়েছে, তিনি তা দেখেছেন। এগুলো কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে উনারা (ইউএনএইচসিআর) সাহায্য-সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

সরকারও তাদের সহযোগিতার বিষয়ে নানাভাবে চেষ্টা করছে।

Be the first to comment

Leave a Reply