বাংলাদেশিদের মত এমন মমত্ববোধ জীবনে দেখিনি: ফিলিপ্পো

জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনার গ্র্যান্ডি ফিলিপ্পো

জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে তা তিনি তাঁর কর্মজীবনে কখনো দেখেননি।

রোববার দুপুরে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের অধিবেশন সমাপ্ত না করেই আমি বাংলাদেশে চলে এসেছি। আমি সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী ছিলাম। তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি।

আমি আবারও বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও শরনার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছিল।

গ্র্যান্ডি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে শরনার্থীদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন সেখানে বাংলাদেশ সরকার ও মানুষ যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ দেখিয়েছে তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।’

গ্র্যান্ডি আরও বলেন, এ মুহুর্তে ত্রাণ তৎপরতা কিছুটা অগোছালো মনে হয়েছে। তবে, মানুষের সহযোগিতা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এ মুহুর্তে এ সহযোগিতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন তাঁর কথা হয়েছে তখন তিনি সমস্যা সমাধানের বিষয়টি মাথায় রাখার অনুরোধ করেছেন।

এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের সহিংসতা দায়ী। এ মুহুর্তে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে রাখাইনের উত্তরে প্রবেশ করতে দিতে হবে। ইয়াঙ্গুনে ইউএনএইচসিআরের অফিস আছে কিন্তু তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ্পোকে শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মনে রাখতে বলেছেন। তাঁর মতে, প্রত্যাবাসনের শুরুতেই যে সমস্যার সমাধান করতে হবে তা হচ্ছে নাগরিকত্বের ইস্যু।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো বলেছন, বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে এখনো অনেকে চাপের মধ্যে আছেন এবং স্থানচ্যুত হয়েছেন। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে তারাও সরে যেতে চাইবেন। রোহিঙ্গা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের যে প্রক্রিয়া চলছে, বাংলাদেশ সরকার সে কাজ করছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে তারপরেও বাংলাদেশ কাজটি করে চলেছে। এ কাজে ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে।

জেনেভা থেকে একটি দল একাজে যুক্ত হয়েছে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রত্যাবাসনের সময় মিয়ানমার কোনো প্রশ্ন তুলবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে গ্র্যান্ডি বলেছেন, ইউএনএইচসিআর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছে।

ইউএনএইচসিআরের হাই কমিশনার গত জুলাই মাসে শরনার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এ দফায় শরনার্থী শিবির পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, শরনার্থীরা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে তা সহজে ভুলবার নয়। তাদের শরীরের ক্ষত হয়তো সেরে যাবে কিন্তু মনের ক্ষত সারতে বহুদিন লাগবে। তিনি এই শরনার্থী সমস্যাকে এ মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি শরনার্থী সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply