
সব আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিঙ্গাপুরে বৈঠকে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা কিম জং উন।
সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেলায় হোটেলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে এই বৈঠক শুরু হয়।
এই বৈঠককে শান্তির লক্ষ্যে ‘একটি সুযোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থেকে আশা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সূচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠক ইতিবাচক হলে উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
দুই নেতার মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধের পর ঐতিহাসিক এ বৈঠক দুদেশের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়বে না দীর্ঘদিনের বৈরিতা বয়ে নিয়ে যাবে তা দেখতে বিশ্বের মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন সিঙ্গাপুর।
এরই মধ্যে বৈঠকে অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে গেছেন ট্রাম্প ও কিম। রোববার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান ট্রাম্প; তার আগেই সিঙ্গাপুরে উড়ে গেছেন কিম। উভয় নেতা সম্মেলন ‘ইতিবাচক হবে’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
এ সম্মেলন ওয়াশিংটনের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের ‘নতুন সম্পর্ক’ স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
সম্মেলনে দীর্ঘদিনের যুদ্ধাবস্থার ইতি টেনে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তিও সই হতে পারে। সেইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার পথ অনুসন্ধানের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গত ১৮ মাসে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার সম্পর্কের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। প্রথম দিকে একে অপরকে চূড়ান্ত অপমান করে যুদ্ধের হুমকি দিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুজনের মধ্যে উষ্ণতার আবহ গড়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় এ সম্মেলন। এতে বৈরিতারর পরিবর্তে জেগে উঠেছে শান্তির আশা।
এ আশাকে রূপায়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক। বৈঠকটি ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে তা নির্ভর করবে দু’পক্ষের সদিচ্ছার ও নমনীয়তার ওপর।
সম্মেলনে অংশ নিতে রোববার দুপুরের দিকে এয়ার চায়নার একটি উড়োজাহাজে করে কিম সিঙ্গাপুর পৌঁছান। আর কানাডায় জি৭ সম্মেলন শেষ করে সেখান থেকে আকাশপথে ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় ট্রাম্প সিঙ্গাপুরের পৌঁছান।
সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর উভয় নেতাই দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে বহু প্রতীক্ষিত এ ঐতিহাসিক বৈঠক উপলক্ষে সিঙ্গাপুরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠকের মূল বিষয়- যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র হ্রাসকরণ এবং উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে নিজেদের পূর্ণ নিরাপত্তা।
৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত ক্যাপেলা হোটেলটি মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ভবনেই গড়ে উঠেছে। এই ভবনগুলো সংস্কার করে বানানো হয়েছে হোটেলটি। সেখানে এক সময় ছিল ব্রিটিশ সেনাদের অফিসার্স মেস। মোট ১১২টি রুম ও কয়েকটি ভিলা রয়েছে হোটেলটিতে।
সেন্তোসা দ্বীপটিকে বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে বাছাই করার সবচেয়ে বড় কারণ নিরাপত্তা। সিঙ্গাপুরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে চারদিক থেকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা অনেকটাই সহজ।
এখন অত্যন্ত চকচকে আর আলো ঝলমল একটি জায়গা হলেও সেন্তোসা দ্বীপের রয়েছে অন্ধকার এক অতীত। ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে এখানে। সে অধ্যায়ের পাতাজুড়ে হত্যা আর রক্তপাতের কাহিনী।
Be the first to comment