
মানবাধিকার সগঠনগুলোর প্রশ্ন আর বিতর্কের মধ্যেও দেশে মাদবিরোধী অভিযান চলছেই। মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন স্থানে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায়ই তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। মাগুরায় উদ্ধার হয়েছে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ।
এছাড়া যশোরে দুজন, কক্সবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন, কুমিল্লায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন, নড়াইলে একজন ও চুয়াডাঙ্গায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে গত ১১ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৮ জন।
নিহতরা সবাই মাদক কেনা-বেচায় জড়িত বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তাদের বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা পড়ার কথা জানানো হলেও এখন গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের খবর দিয়ে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলিতে মারা পড়ছেন তারা।
সমালোচনার মধ্যেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ যুদ্ধে নেমেছেন, নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
মঙ্গলবারও দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এবং ‘নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে’ আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লায় র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে পাঁচজন এবং যশোর ও মাগুরায় ‘নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা: রাজধানীর ভাষানটেকে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- বাপ্পি (৩৮), আতাউর রহমান আতা (৪০) ও মোস্তফা হাওলাদার (৪৫)। এসময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভাষানটেকের লোহার ব্রিজ এলাকার একটি বাড়িতে মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালানো হয়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে তিন মাদক বিক্রেতা নিহত হন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহসান হাবিব (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এসময় র্যাবের ৩ সদস্য আহত হন বলে দাবি করেছে র্যাব। আহত র্যাব সদস্যদের সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে কামারখন্দ উপজেলায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে কামারখন্দসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে বলে র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান।
যশোর : বেনাপোলে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘গোলাগুলিতে’ দুই জন নিহত হয়েছে। বুধবার ভোরে বড়আঁচড়া এলাকায় এই ‘গোলাগুলির’ ঘটনা ঘটে। এসময় সেখান থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের মৃত শাহাজানের ছেলে লিটন (৩৪) ও অজ্ঞাত (৪০) ।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, বুধবার ভোরে বেনাপোল বড়আঁচড়া এলাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পান। খবর পেয়ে সেখানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এসময় সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখে তাদের উদ্ধার করা হয়। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্দের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাগুরা : মাগুরা শহরতলীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে তিন মাদক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, শহরের ইসলামপুর পাড়ার রাজ্জাক ঢালীর পুত্র রায়হান ঢালী ওরফে বিট্রিশ (৩০), ভায়না এলাকার মহিউদ্দিন চোপদারের পুত্র বাচ্চু চোপদার (৫৫) ও শহরের নতুন বাজার বৈরাগি পাড়ার খোকন অধিকারীর পুত্র কিশোর অধিকারী ওরফে কালা।
পুলিশ সুপার খান মো. রেজোয়ান জানান, শহরতরীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ সেখানে গিয়ে তিন ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় সেখান থেকে ৩২০ গ্রাম হেরোইন, এক কেজি গাঁজা, ছয় বোতল ফেনসিডিল, ছয়টি রাইফেলের গুলি, আটটি গুলির ঘোসা উদ্ধার হয়। পুলিশ দ্রুত তিনজনকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎস তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় বুড়িচংয়ে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিব্ধ হয়ে রোছমত আলী (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে জেলার বুড়িচং উপজেলার লড়িবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রোছমত আলী উপজেলার ছয়গ্রাম এলাকার মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে। এছাড়া কুমিল্লা সদরের পালপাড়া ব্রিজের সামনে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহ আলম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে জানান, মাদক উদ্ধার করতে উপজেলার লড়িবাগ এলাকায় রাস্তার পাশে পুলিশ অবস্থান নেয় । সেখানে মাদক ব্যবসায়ী রোছমত ও তাদের সহযোগীরা পৌঁছলে তাদের আটকের চেষ্টাকালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় ২৫ রাউন্ড গুলি চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী রোছমত গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই অভিযানের সময় থানার ৩ পুলিশ আহত হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় কুমিল্লা সদরের পালপাড়া ব্রিজের সামনে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহ আলম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত শাহ আলম নগরীর নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা।
Be the first to comment