
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. উজ্জ্বল মিয়া বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকেদের সাথে আলাপকালে বলেন, বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আসার পর রাতে বসে পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শুধু একটাই অনুরোধ করব, কোনো মামলা দিয়ে আমাদের সাধারণ আন্দোলনকারীদের যেন হয়রানি করা না হয়।”
গত কয়েক দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে যেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা, সেখান থেকেই কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, “পরে আমরা আনন্দ মিছিল করব। প্রধানমন্ত্রীর জন্য ফুল নিয়ে যাব। আর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করব।”
এর আগে ,কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ও বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার বিকালে সংসদে কেটা কোটা পদ্ধতি বাতিলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হিাসিনা।
এরপর বক্তব্যের প্রায় প্রতিটি ছত্রে চলমান আন্দোলন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, “বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”
আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দুদিন আগে বৈঠক করলেও প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বুধবার সকালে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কথা বলবেন।
আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীদের এবার ঘরে ফিরে যেতে বলেন তিনি। আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলাকার জন্য দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার কথাও তিনি বলেন।
ফেইসবুকে এক ছাত্রের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে উসকানির কথাও বলেন তিনি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
বক্তব্যে কোটা কেন রাখা হয়, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে থাকা জনপদের মানুষদের তুলে আনতে এই কোটা ব্যবস্থা।
সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে অনগ্রসরদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে; তা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটা না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের কথাও বলেন শেখ হাসিনা, তবে সেটা কীভাবে তা ব্যাখ্যা করেননি।
তিনি শুধু বলেন, “যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী তাদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছে। তারা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানায়।
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর সাংবাদিকদের বলেন, তারা রাতে বসে এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত জানাবেন।