
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এক হাজার একর জমিতে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হয়ে ওই সংঘর্ষ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। এসময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ, পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখা, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া বিকাল সাড়ে ৫টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মাইকিং করে স্থানীয়দের শান্ত ও অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের মুক্ত করেন।
এদিকে তিস্তা সোলার লিমিটেডের আনছার ক্যাম্প, পুলিশ ক্যাম্প ও বিভিন্ন অফিসে লাগানো আগুন ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার তিস্তা সোলার লিমিটেডের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বালু ভরাট নিয়ে আবাদি জমি ও বসত ভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিস্তা সোলার লিমিটেডের লোকজনের মতবিরোধ দেখা দেয়। খবর পেয়ে থানার এসআই আলম বাদশা ফোর্স নিয়ে খোর্দ্দার চরে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট, টিয়ার সেল ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
গাইবান্ধা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে আবাদি জমি ও বসত ভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটি সভাপতি মোজা মন্ডল দাবি করেছেন, সংঘর্ষে কমিটির ১০ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরা হলেন, রেজাউল ইসলাম, আরজিনা বেগম, রুবিয়া বেগম, বাদশা মিয়া, শরফুল মিয়া, মোজা মন্ডল, মামুন মিয়া, মুক্তি মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক।
সংঘর্ষে এসআই আলম বাদশা, কনস্টেবল মোজাম্মেল হকসহ বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাকিবুল ইসলাম বলেন, চর খোর্দ্দা থেকে আহত কয়েকজন হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের রংপুর পাঠানো হয়েছে। আহতদের শরীরে রাবার বুলেটের আঘাতের মতো ক্ষত হয়েছে।
তিস্তা সোলার লিমিটেডের চিফ কো-অর্ডিনেটর ও প্রধান প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. ইয়ার আলী জানান, অধিগ্রহণকৃত জায়গায় ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট করছিল শ্রমিকরা। শনিবার খোর্দ্দার চরের কিছু লোক ড্রেজার মেশিনের পাইপ কেটে দেয়। এনিয়ে থানায় মামলার পর পুলিশ মঙ্গলবার বিষয়টি তদন্ত করতে গেলে স্থানীয়রা পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয়রা সোলার লিমিটেডের সদ্য নির্মিত আনছার ক্যাম্প ও বিভিন্ন অফিসে আগুন দেয়।
২০১৭ সালে ২৬ অক্টোবর তিস্তা সোলার লিমিটেড ও সরকারের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় ও বাস্তবায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কেন্দ্র স্থাপনে এরইমধ্যে সাতশ’ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রাচীর, পাকা রাস্তা, আনসার ক্যাম্প, শিল্প পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, বালু ভরাট ও আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ।