
কৃষি ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ভেঙে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভক্তি ঘুচিয়ে আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পুরনো নেতারা।
সেই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, সড়ক অবরোধসহ সব ধরনের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মলেনে বলেন, “গতকাল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা করেছিলাম…”
“কিন্তু কাল সংসদে দাঁড়িয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ৮০ শতাংশ আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালিগালাজ করেন। এরপর আজ বিকেলে আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটের আগ পর্যন্ত কোটা সংস্কার সম্ভব নয়। এই দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া আমরা মানি না।”
পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, “সচিবালয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত সারাদেশের ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি। আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা বাংলাদেশের রাস্তা অবরোধ করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
গত কয়েক দিনের আন্দোলনের মধ্যে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, রোববারের সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং কোটার বিষয়ের প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবি জানিয়ে রাশেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই, আপনার সন্তানদের এই বিপদের মুখে রাস্তায় ফেলে দেবেন না, দয়া করে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিন।”
শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘চাইলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘কোটা সংস্কার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এই রাশেদই সকালে একই জায়গায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সচিবালয়ের সমঝোতার সিদ্ধান্ত না মেনে যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তারা ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী’।
বিকালের সংবাদ সম্মেলনের পর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হয়।
সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলনরতদের সঙ্গে রোববার সারা রাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলে।
এরপর সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে ৭ মের মধ্যে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধাস্ত আসে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষন পরিষদ ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।