
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে বলেও মনে করেন মওদুদ।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের যেটুকু স্বাধীনতা ছিল, সেটাও এই সরকার নস্যাৎ করে দিল।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মওদুদ আহমদ এ মন্তব্য করেন। ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল এই সভার আয়োজন করে।
মওদুদ আহমদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নাকি পদত্যাগ করেছেন! বিচার বিভাগের ও আদালতের স্বাধীনতার জন্য আজ একটি কলঙ্কের দিন। তাঁকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। বিচার বিভাগের যে সামান্য স্বাধীনতা ছিল, এই সরকার তা নস্যাৎ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের বিপক্ষে গেছে বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এটা করল। অথচ সরকার রিভিউ আবেদন করতে পারত।
মওদুদ বলেন, সরকার সমন্বিতভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি করল।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রটি আজ বঙ্গভবনে এসেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ঐতিহ্য নিয়ে আমরা যে গর্ব করতাম, তা আর থাকল না। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকারের কোনো লাভ হলো কি না জানি না, তবে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। বিচার বিভাগের মান আমরা উদ্ধার করতে পারব কিনা সন্দেহ আছে।’
অন্য প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো। আবার দেশে ফিরে তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে সাপ্তাহিক জামিন পেলেন। বিষয়টি কেমন হলো আপনারাই বিবেচনা করেন?
তিনি বলেন, ‘আমার ৫০ বছরের আইন পেশায় আমি এ ধরনের ঘটনা শুনিনি। এটা করে নেত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। সাপ্তাহিক জামিন দেওয়ার বিষয়টি অশোভনীয় আচরণ। আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই বলেই এমনটি হচ্ছে।’
দেশে বর্তমানে কোন নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, এটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে সুষ্ঠু ভোট হবে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলেও মনে করেন মওদুদ।
জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহসক অনেকে।