টেস্টের পর ওয়ানডেতেও হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা

সিরিজের শেষ ম্যাচেও দৃশ্যপটে পরিবর্তন হলোনা টাইগারদের চিত্রনাট্যে। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের দাপট এবং পরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণ। রোববার বাংলাদেশকে ২০০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই হারের ফলে টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগাররা।

রোববার ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কুইন্টন ডি কক এবং টেম্বা বাভুমার গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ডু প্লেসিস ও অভিষিক্ত এইডেন মার্করামের ব্যাটে বড় নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৬ বল বাকি থাকতেই ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ৩৩৩ রানে বড় ব্যবধানে হার দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশের হারটি ইনিংস ও ২৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে যথাক্রমে ১০ উইকেট ও ১০৪ রানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সাকিব আল হাসান ছাড়া বাংলাদেশের টপ ও মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হন। ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফসেঞ্চুরি করা সাকিব বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন। এছাড়া সাব্বির রহমান ৩৯, মাশরাফি ১৭ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ১৩ রান। ইমরুল কায়েস (১), লিটন দাস (৬), সৌম্য সরকার (৮) ও মুশফিক ছিলেন (৮) আসা-যাওয়ার মিছিলে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ড্যান প্যাটারসন তিনটি এবং অভিষিক্ত এইডেন মার্করাম ও ইমরান তাহির নেন দুটি করে উইকেট। ক্যাগিসো রাবাদা, উইলেম মোল্ডার ও আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো নেন একটি করে উইকেট।

বড় লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে নামা বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নামেন ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। ড্যান প্যাটারসনের করা করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড-অফে ফারহান বিহারদিয়েনকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল।

সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লিটন। প্যাটারসনের করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানও। সৌম্যর সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ না দিয়েই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটন। ফলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

সেই বিপর্যয় আরো বাড়িয়ে দেন সৌম্য। ক্যাগিসো রাবাদার করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে এইডেন মার্করামকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য।

দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশ মুশফিক-সাকিবের ব্যাটে প্রতিরোধের স্বপ্ন দেখছিল। তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি এই জুটি। আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো’র করা ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে খেলতে গিয়ে মিডঅফে রাবাদার হাতে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে যান মুশফিক।

কিছুক্ষণ পর ফের হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এবার অভিষিক্ত উইলেম মোল্ডারের করা ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশকে হারের মুখে রেখে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে সাকিবের সঙ্গে যোগ দেন সাব্বির।

সাকিব ও সাব্বিরের ব্যাটে সম্মানজনক সংগ্রহের জন্য ভালোই লড়ছিল বাংলাদেশ। দারুণ খেলতে থাকা সাকিব হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। তবে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের বড় হার সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। দলীয় ১২৮ রানের মাথায় অভিষিক্ত এইডেন মার্করামের করা দলীয় ৩১তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ মিডউইকেটে বদলি ফিল্ডার জেপি ডুমিনিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।

সাকিবের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাব্বিরও। দলীয় ১৩৫ রানের মাথায় মার্করামের বলে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

সাব্বিরের বিদায়ের পর মাশরাফি ও মিরাজ মিলে ২৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান কমান। পরপর শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে দলকে ঠিকই বড় জয় এনে দেন তাহির।

এর আগে রোববার ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে বাংলাদেশ সময় দুপুর শুরু হওয়া ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার দলনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। কুইন্টন ডি কক এবং টেম্বা বাভুমার গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ডু প্লেসিস ও অভিষিক্ত এইডেন মার্করামের ব্যাটে বড় নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিকরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৯১ রান করা ফাফ ডু প্লেসিস হ্যামস্ট্রিং চোট নিয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। এছাড়া ডি কক ৭৩, মার্করাম ৬৬, বাভুমার ৪৮, ফারহান বিহারদিয়েন ৩৩, ক্যাগিসো রাবাদা ২৩ ও এবি ডি ভিলিয়ার্স করেন ২০ রান।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ। রুবেল হোসেন নেন একটি উইকেট।

টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের হতাশা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আগামী ২৬ ও ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচ দুটি।