শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফোন; রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা

শেখ হাসিনা ও অ্যান্তনিও গুতেরেজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বললেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন বলে জানান তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

তিনি জানান, আন্তোনিও গুতেরেস ও শেখ হাসিনা টেলিফোনে প্রায় ২০ মিনিট রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।

লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বেগ জানিয়েছেন। এই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি জানিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও অন্যান্য সেবা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে স্বভূমিতে পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমারের উপর আরও চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সংকটের অবসানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর তুলে ধরা পাঁচ দফা প্রস্তাব যাতে বাস্তবায়িত হয় সেজন্য গুতেরেসের সমর্থন চান তিনি।
“এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আমি পাঁচ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম,” বলেন তিনি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে ভাষণে মিয়ানমারে উৎপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় প্রস্তাব তুলে ধরে মানবিক এই সঙ্কট অবসানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ত্বরিত পদক্ষেপ চান শেখ হাসিনা।

আর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূলের’ চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে কয়েক দফায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে গত মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্যে গুতেরেস বলেন, রাখাইনে সহিংসতা রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুতই বিশ্বের বড় উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে, যা মানবিকতা ও মানবাধিকারের জন্য ‘দুঃস্বপ্নের’ জন্ম দিয়েছে।

তিনি বলেন, “পালিয়ে আসা, যাদের বেশিরভাগ নারী, শিশু ও বয়স্ক, তাদের কাছ থেকে আমরা রক্ত হিম করা বক্তব্য পেয়েছি। তাদের বর্ণনায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ভূমি মাইন ব্যবহার ও যৌন সহিংসতাসহ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের কথা উঠে এসেছে।”

সংকট সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সংকটের সমাধান না হলে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পুরো অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষের ঝুঁকি তৈরি হবে।

দশকের পর দশক শোষণ-বৈষম্যের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে চরমপন্থার উত্থান ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব জানান, টেলিফোন করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তার সমর্থন ও অব্যাহত তৎপরতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নিজ ভূমিতে যাতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য উপায় বের করতে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ শুরু করেছে বাংলাদেশ।

গুতেরেসকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি খুব ভালোভাবে জানেন যে, সমস্যার মূল মিয়ানমারে এবং সেখানেই এই সংকটের সমাধান পাওয়া যাবে।”

রোহিঙ্গা সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে (গুতেরেস) অবহিত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগিরই নিউ ইয়র্ক সফর করবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“রোহিঙ্গা সংকটের একটি সমাধান খুঁজতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও মিয়ানমারে পাঠাচ্ছি,” গুতেরেসকে েএমন তথ্যও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের স্রোত এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং মিয়ানমারে তাদের প্রতি সহিংসতা এখনও বন্ধ হয়নি।জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ইতোমধ্যে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে, যাতে সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখে,” বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণ জাতিসংঘের সব সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে সংকট মোকাবেলা করছে।