পেপ্যাল যুগে বাংলাদেশ; দুই ঘন্টায় টাকা আসবে বিদেশ থেকে

পেপ্যাল জুম সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সজিব ওয়াজেদ জয়

অনেক আলোচনা আর প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশে শুরু হলো অনলাইন ভিত্তিক অর্থ লেনদেন সেবা পেপ্যালের জুম সার্ভিস। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জয় বলেন, এত দিন ধরে প্রবাসীরা বিভিন্ন চ্যানেলে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে যেমন পয়সা বেশি খরচ হচ্ছে, তেমনি বিড়ম্বনার শিকারও হচ্ছেন। পেপ্যালের জুম সেবা চালুর মাধ্যমে এখন থেকে তাঁরা সহজেই পেপ্যালের অ্যাকাউন্ট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে অর্থ দেশে পাঠাতে পারবেন। শুধু ফ্রিল্যান্সাররা নন, প্রবাসীরাও এই সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়নকে ‘ইনফো সরকার ৩’ প্রকল্পের আওতায় ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের মধ্যে আনা হবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের দাম প্রতিবছর কমানোর আশ্বাস এবং চলতি বছরের মধ্যে ফোরজি চালুর ঘোষণাও দেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। পেপ্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ আনার সুযোগ সৃষ্টি করা ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই সেবা উদ্বোধনের মাধ্যমে সেই দাবি পূরণ হলো।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আপাতত পেপ্যালের জুম সার্ভিসের মাধ্যমে আমাদের ফ্রিল্যান্সার ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অর্থ পাঠাতে (ইনবাউন্ড) পারবেন। তবে দেশ থেকে অর্থ বিদেশে পাঠানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে আউটবাউন্ডসহ পরিপূর্ণ পেপ্যাল সেবা চালু করতে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এই সেবা চালুর ফলে বাংলাদেশের পাঁচ লাখ ফ্রিল্যান্সার উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প থেকে বাছাই করা দুই হাজার ফ্রিল্যান্সার অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ১৬ জনকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়।

বিশ্বের ২০৩টি দেশে পেপ্যাল সেবা চালু আছে। এর মধ্যে ২৯টি দেশে পূর্ণাঙ্গ সেবা ও ১০৩টি দেশে ইনবাউন্ড সেবা চালু আছে। জুম সেবা চালুর ফলে পেপ্যালের অ্যাকাউন্টধারীরা আগে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারতেন না। তবে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেপ্যাল অ্যাকাউন্টধারীরা তাঁদের পেপ্যাল ওয়ালেট ব্যবহার করে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পাঠাতে পারবেন।

পে-পাল জুম সেবা শুরু হলো বাংলাদেশে

প্রতি লেনদেনে এক হাজার ডলার পর্যন্ত পাঠাতে ৪ দশমিক ৯৯ ডলার ফি লাগবে। আর এক হাজার ডলারের বেশি অর্থ পাঠাতে কোনো ফি লাগবে না। সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকে প্রাথমিকভাবে এই সেবা চালু হচ্ছে।

কীভাবে কাজ করে পেপ্যাল

পেপ্যাল একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যারা অর্থের স্থানান্তর বা হাতবদল ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে সহায়তা দিয়ে থাকে। অননলাইনে অর্থ স্থানান্তরের এই পদ্ধতি গতানুগতিক অর্থের লেনদেনের পদ্ধতি যেমন চেক বা মানি অর্ডারের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।

একটি পেপ্যালের একাউন্ট খোলার জন্য কোন ব্যাঙ্ক একাউন্টের ইলেকট্রনিক ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড লাগবে। পেপ্যালের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রহীতা পেপ্যাল কর্তৃপক্ষের নিকট চেকের জন্য আবেদন করতে পারে, অথবা নিজের পেপ্যাল একাউন্টের মাধ্যমে খরচ করতে পারে অথবা তার পেপ্যাল একাউন্টের সাথে সংযুক্ত ব্যাঙ্ক একাউন্টে জমা করতে পারে।

পেপ্যাল অনলাইন বিক্রেতাদের জন্য অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, এছাড়াও অনলাইন , নিলামের ওয়বসাইট, ও অন্যান্য বানিজ্যিক ওয়েবসাইট পেপ্যালের সেবা গ্রহণ করে যার জন্য পেপ্যাল ফী বা খরচ নিয়ে থাকে। এছাড়াও অর্থ গৃহণের জন্যেও ফী নিয়ে থাকে যা মোট গৃহীত অর্থের সমানুপাতিক হয়ে থাকে। এই ফী বা খরচ নির্ভর করে কোন দেশের মূদ্রা ব্যাবহার হচ্ছে, কিভাবে অর্থের লেনদেন হচ্ছে প্রেরক ও প্রাপকের দেশ, পাঠানো অর্থের পরিমাণ ও প্রাপকের একাউন্টের ধরণের ওপরে।

এছাড়াও, ইবে ওয়েবসাইট থেকে পেপ্যালের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে পেপ্যাল আলাদা অর্থ গ্রহণ করতে পারে যদি ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন মূদ্রা ব্যাবহার করে।

২০০২ সালের ৩রা অক্টোবার পেপ্যাল বৃহৎ নিলাম সাইট ই-বের অঙ্গপ্রতিষ্টান হিসেবে মালিকানা পরিবর্তন করে।যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার, সান জোসে, শহরে পেপ্যালের প্রধান শাখা অফিস যা ই-বের নর্থ ফার্স্ট স্ট্রীট স্যাটেলাইট অফিসে অবস্থিত। এছাড়াও এই প্রতিষ্টানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড রয়েছে নেব্রাস্কার ওমাহা ; আরিজোনার স্কটডেল; এবং অস্টিন টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রের. মধ্যে, এছাড়াও রয়েছে চেন্নাই, ডাবলিন, ক্লিয়েনম্যাকনো এবং তেল আভিভ. জুলাই ২০০৭ পর্যন্ত , সমগ্র ইউরোপে পেপ্যাল একটি লুক্সেমবুর্গ-ভিত্তিক ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচালিত হয়।