দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া; আজ যাবেন আদালতে

বেগম খালেদা জিয়া

তিন মাসের বেশি সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেল সোয়া ৫টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর এলাকায় বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ভির করেন।

চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা নিতে গত ১৫ জুলাই লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে দুপুর থেকেই বিমানবন্দর এলাকার রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা ; দুপুরের পর থেকেই ওই সড়কে দেখা দেয় যানজট । শ্লোগানের – শ্লোগানে চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান নেতাকর্মীরা।

বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি তার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় যান। একই ফ্লাইটে ফিরেছেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার।

বিমানবন্দর এলাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে দলের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে ও বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তবে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল বেশি।

খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাড়তি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী মাসুদ রানা ও গুলশান কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ছাড়া অন্যদের বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি।

চারজন ছাড়া জ্যেষ্ঠ নেতাসহ অন্য কাউকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ভিআইপি লাউঞ্জে পুলিশ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছে সড়কের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান এবং খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি আসার পর ফুল দিয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘তাদের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতে পুলিশ বাধার সৃষ্টি করেছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। অথচ আপনারা দেখবেন পুলিশ কতভাবে তাদেরকে বাধা দিচ্ছে। বিমানবন্দর সড়কে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে লোক সমাগম না হয়। তারপরও ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ দেশনেত্রীর আগমনে শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুত।’

এদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, দলের চেয়ারপারসন বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া মামলাগুলোর জামিন নিতে আদালতে যাবেন। মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছে, চলতি মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরকালে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি সুযোগ সময় মতো ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ রূপরেখা ঘোষণা করবেন।

এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনের নেতা আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, বিমানবন্দর থেকে বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জহিরউদ্দিন স্বপন, দিলদার হোসেন সেলিমসহ দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার ঢাকায় বসবাসকারী নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ ব্যানার হাতে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।

তিন মাস পর দেশে ফেরা দলের চেয়ারপারসনকে এভাবেই শুভেচ্ছা জানান নেতা-কর্মীরা।

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর মোড় থেকে বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত সড়কের এক পাশে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমবেত হয়। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক পুলিশও মোতায়েন করা হয়। জলকামানের দুটি গাড়ি, প্রিজনভ্যানসহ পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিমানবন্দরের ভেতরে পুলিশ ছাড়াও সোয়াত, ব্যাটালিয়ান পুলিশ সদস্যের দেখা গেছে। নেতাকর্মীদের সারিবদ্ধভাবে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে বারবার পুলিশ মাইকে ঘোষণা দেয়। রাস্তায় নামলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় পুলিশ।

খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানতে সড়কে হাজার হাজার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচলের গতি একেবারেই কমে যায়। সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। একপর্যায়ে যান চলাচল থমকে যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন পথচলা মানুষেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, শেওড়াবাজার, বনানীর কাকলী মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। বিমানবন্দরের এই সড়কের যান চলাচলের ধীর গতির প্রভাবে উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী পর্যন্ত দূরপাল্লার গাড়িগুলোর গতি কমে যায়। তবে রাস্তায় ব্যাপকভাবে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে নেতাকর্মীদের চাপে তাদের কিছুই করার ছিল না।

আজ আদালতে যাবেন খালেদা

এদিকে, আজ খালেদা জিয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া মামলাগুলোতে জামিন নিতে আদালতে যাবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে সরকার রাজনৈতিক মনোভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাকে দেশনেত্রী ভয় পান না। আমাদের নেত্রী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই তিনি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে ওইসব মামলায় জামিন নেবেন।’ জামিনের ব্যাপারে সরকার কোনো ভুল করবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

১৫ জুলাই লন্ডন পৌঁছার পর থেকে খালেদা জিয়া বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। বড় ছেলের পরিবার অর্থাৎ তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানকে নিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করেন খালেদা জিয়া। গত ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের মুরফিল্ড হসপিটালে তার ডান চোখের অস্ত্রোচার হয়। হাঁটুর আর্থারাইটিসের চিকিৎসাও করিয়েছেন তিনি।