
সাম্প্রতিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বায়নের যুগে দীর্ঘ সময় মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের স্ক্রিনে একটানা তাকিয়ে থেকে কাজ করা এমনকি অনেক সময় আবহাওয়া, ধুলোবালির কারণে মাথাব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আবার অনেক সময় মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ক্লান্ত দেহ, সাইনাস, মাইগ্রেন, পানিশুন্যতা, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হয়। এই সকল ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া ও প্রাথমিক উপায় সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১.আকুপ্রেশারঃ
বহুবছর ধরে মাথা ব্যথা দূর করতে অনেকেই আকুপ্রেশার পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনির মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে চাপ দিন এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। একই ভাবে ডান হাতেও করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আশা করা যায় এই ছোট্ট ঘরোয়া পদ্ধতিতে এক মিনিটেই আপনার মাথা ব্যথা সারবে।
২.পানিঃ
একচুমুক পানি পান করলেও সেটা এক মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যথা সারাতে কাজে দেবে। যখন আমাদের শরীর আর্দ্র হতে থাকে তখন ধীরে ধীরে ব্যথা উপশম হয়।
৩.আদাঃ
আদার অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান মাথা ব্যথা কমাতে জাদুকরী ভূমিকা রাখে। আদার উপকারী উপাদান সমূহ রক্ত প্রবাহ ঠিক রেখে মাথাব্যথায় দ্রুত আরাম দেয়। মাথাব্যথা শুরুর সাথে সাথে আদা চা খেতে পারেন অথবা এক পিস টাটকা আদা চিবুতে পারেন এতে ৬০ সেকেন্ডে মাথা ব্যথা দূর হবে। আদা একটু বাজে গন্ধের হলেও পদ্ধতিটি কাজের।
৪.লেবুঃ
ঝটপট মাথাব্যথা সারিয়ে তুলতে লেবুর তুলনা হয়না। ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে আপনি যদি গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খান তাহলে মাথাব্যথা দ্রুত কমে আসবে। আপনি যদি লেবু পেস্ট করে কপালে লাগান তাতেও মাথা ব্যথা কমবে আর সাথে খেতে পারেন এক কাপ লেবু চা।
৫.মিষ্টিকুমড়োর বিচিঃ
মিষ্টি কুমড়োর বিচি ভেজে খেলে মাথাব্যথার সমস্যা থেকে দুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ মিষ্টি কুমড়োর বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা মাথাব্যথা উপশমে কাজ করে থাকে।
৬.কাঠবাদামঃ
একমুঠো বা দুইমুঠো কাঠবাদাম চিবিয়ে খান। কাঠবাদামে রয়েছে ‘স্যালিসিন’ যা শুধু মাথাব্যথা উপশমেই কাজ করে না রবং দ্রুত ব্যথা নিরাময় করে।
৭.পান পাতাঃ
পান পাতার প্রাকৃতিক মাথা ঠাণ্ডাকারী উপাদান মুহূর্তেই মাথা ব্যথা সারিয়ে তুলতে কার্যকারী অবদান রাখে। মাথাব্যথা সারাতে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে তাজা দেখে তিন থেকে চারটি পান পাতা নিয়ে মোলায়েম করে ছেঁচে কপালে লাগিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টার মধ্যে এটি আপনাকে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।
৮.পেপারমিন্টঃ
মাথাব্যথা সারিয়ে তোলার আরো একটি কার্যকরী উপায় হলো কপালে পেপারমিন্ট মালিশ করা আর ঘাড়ে সামান্য পেপারমিণ্ট মালিশ করা। এরূপে করেই দেখুন মাথাব্যথা একদম সেরে যাবে।
৯.আইসব্যাগঃ
বাজারে নানা আকারের অনেক আইসব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। একটি আইসব্যাগে বরফ ভরে নিয়ে তা মাথার ওপরে অর্থাৎ ঠিক মাথার তালুতে খানিকক্ষণ ধরে রাখুন। দেখবেন মাথা ব্যথা উপশম হচ্ছে। তবে যাদের হুটহাট ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে তারা এই পদ্ধতি পালন না করাই ভালো।
১০.গোসলঃ
প্রচণ্ড গরমের অস্বস্তি থেকে মাথা ব্যথা হতে পারে। মাথা ব্যথা শুরু হলে গোসল করে ১ কাপ গরম চা পান করতে পারেন। এটি স্বস্তি দেবে।
১১.লবঙ্গঃ
কিছু লবঙ্গ তাওয়ার মধ্যে গরম করে নিন। গরম লবঙ্গ একটি রুমালের মধ্যে নিন। এক মিনিট এর ঘ্রাণ নিন এবং দেখুন মাথা ব্যথা চলে গেছে।
১২.লবণযুক্ত আপেলঃ
ব্যথা যদি বেশি হয় তবে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক টুকরো আপেল চিবুতে পারেন তবে এতে একটু লবণ ছিটিয়ে নেবেন। এটা দ্রুত ব্যথা মুক্ত করতে সাহায্য করবে।
১৩.ইয়োগাঃ
এক জায়গায় বসেই কিছু সময়ের জন্য ইয়োগা করে ফেলতে পারেন মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। চোখ বন্ধ করে বাতাস টেনে নিন নিঃশ্বাসের সঙ্গে। তারপর ধীরে ধীরে ছাড়ুন শ্বাস। এভাবে কয়েক মিনিট করুন, শরীর রিল্যাক্স হবে।
১৪.ম্যাসাজ ঃ
কপাল ও আশেপাশের অংশ ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করলে মুক্তি মিলতে পারে হঠাৎ শুরু হওয়া মাথা ব্যথা থেকে।
১৫.ব্যায়ামঃ
মাংসপেশির ব্যায়ামে অনেক সময় কমে যায় মাথা ব্যথা। সোজা হয়ে বসে সামনে ও পেছনে কাঁধ এগিয়ে এনে চক্রাকারে মাথা ঘুরিয়ে নিন। তারপর এভাবে কিছুক্ষণ করলে দূর হতে পারে মাথা ব্যথা।
১৬.ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের সতর্কতা সমূহঃ
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হয়। একসময় চোখ, মাথা একসাথে কষ্ট দেয়। সুতরাং এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা, নিয়ম ও সময় মেনে চলতে হবে।
#মনিটরে তাকিয়ে থাকা কমানো,
#কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখা,
#এন্টি রিফ্লাক্সন চশমার ব্যবহার করা,
#স্ক্রিন ব্রাইটনেস (উজ্জলতা) কমিয়ে, চোখের সহনীয় মাত্রায় রাখা ইত্যাদি। সম্ভব হলে ১০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিয়ে নিন।
১৭.গান, গজল, কবিতা ইত্যাদিঃ
মন ভালো করার পাশাপাশি মাথা ব্যথা উপশমে সব চাইতে ভালো কাজ হচ্ছে গান শোনা। ‘জার্নাল অফ পেইন’ গবেষণাপত্রে প্রকাশ হয় গান শোনা প্রায় ১৭% ব্যথা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। কারণ গান মনোযোগ দিয়ে শোনার সময় আমাদের লক্ষ্য মাথা ব্যথা থেকে সরে যায় যা আমাদের মাথা ব্যথার কথা অনেক সময় ভুলিয়ে দেয়। এতে করেই সেরে উঠে মাথা ব্যথা।
১৮.হাসি খুশি মনঃ
অনেকেই হয় তো বিশ্বাস করবেন না, তবে মনকে যদি ইতিবাচক এবং ভালো বিষয়ের দিকে নিয়ে যান তবে মাথা ব্যথা ৬০ সেকেন্ডেই দূর হবে। চেষ্টা করেই দেখুন না!