ঘরের মাঠে এখন অনেক আত্মবিশ্বাসি বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ান সাথে সর্বশেষ সিরিজের আগেই যেমন মুশফিক-সাকিবরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২-০ ব্যবধানে জিততে চান। এ রকম ঘোষণা আগে কখনো শোনেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিরা। তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে!
শেষ পর্যন্ত ২-০ না হলেও বাংলাদেশ যে সে পথেই ছিল দ্বিতীয় টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়াকেই শেষ পর্যন্ত সিরিজ বাঁচাতে লড়াই
সেটিই প্রমাণ করে।
এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাংলাদেশ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। পচেফস্ট্রুমে বৃহস্পতিবার শুরু সিরিজের প্রথম টেস্ট। প্রতিপক্ষ টেস্টের দ্বিতীয় সেরা দল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন দলের বিপক্ষে জয়ের আগাম ঘোষণা দিয়ে নামা বাড়াবাড়ি। বুধবার সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বক্তব্যে ঘুরেফিরে যা এল, তাতে বরং এটাই মনে হলো, বাংলাদেশ দল এই সিরিজ খেলতে চায় ‘লো প্রোফাইলে’ থেকে।
তবে ফলাফলে চমকে দিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও নতুন কিছু করার গোপন ইচ্ছা যে আছে, টেস্ট অধিনায়ক সেটা লুকাতে পারেননি।
প্রত্যাশার লাগাম টানতেই হয়তো মুশফিক মনে করিয়ে দিয়েছেন কিছু কথা। বাংলাদেশ টেস্টের সেরা তিন দলের মধ্যে নেই। মাঠে নেমে ধুমধাম ম্যাচ জিতে আসার দলও এখনো তারা হয়ে ওঠেনি।
তাঁর ভাষায়, ‘আমরা নিচু সারির একটি দল। আমাদের নিজেদের একটু অন্যভাবে তুলে ধরতে হয়। জয় বা ভালো খেলার জন্য আমাদের দুই শ ভাগ দিতে হয়।’ মুশফিক বিনয় দেখালেও ফাফ ডু প্লেসির কথায় বাংলাদেশের প্রতি কিছুটা হলেও সমীহ খুঁজে পাওয়া গেল, ‘বাংলাদেশ খুব ভালো খেলছে। তাদের দেশে গেছে এ রকম প্রায় সব দলকেই তারা হারিয়েছে।’
তবে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়কও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এবারের সিরিজটা বাংলাদেশ ঘরের মাঠে খেলবে না। তাদের লড়াই করতে হবে অচেনা কন্ডিশনের সঙ্গেও, ‘এখানকার কন্ডিশন ভিন্ন। এখানে এসে আমাদের হারানোটা তাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’ সেরা খেলাটা খেলতে না পারলে যেকোনো দলের সঙ্গেই হারার শঙ্কা থাকে, ৪৩টি টেস্ট আর ১১৩টি ওয়ানডের অভিজ্ঞতার পর সেটি তাঁকে কারও বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ডুপ্লেসি জানালেন, ‘অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে খেলার আগে আমরা যে রকম প্রস্তুতি নিয়ে থাকি, এবারও সে রকমই নিয়েছি। বাংলাদেশকেকোনোভাবেই হালকা করে নিচ্ছি না।’
দক্ষিণ আফ্রিকার এই সতর্কতা বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক অঘটনঘটনপটীয়সিতার কারণে। তবে সাকিব আল হাসান না থাকায় দল তো একটু হালকা হয়ে আছেই। অলরাউন্ডার সাকিবের জায়গায় এখন দুজন খেলোয়াড়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। কাল সংবাদ সম্মেলনে সে চ্যালেঞ্জের কথাই বলছিলেন অধিনায়ক মুশফিক, ‘আমরা সব সময় সেরা কম্বিনেশন নিয়ে খেলার চেষ্টা করি।
এখন দুজন খেলোয়াড় খেলাতে হবে। একজন ব্যাটসম্যান খেলাতে পারি। একজন পেসার বা একজন বাড়তি স্পিনারও নিতে পারি। সব দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে কাজটা অবশ্যই কঠিন।’
সাকিবের অনুপস্থিতিকে নিজেদের জন্য বিরাট সুবিধা মনে করছেন ফাফ ডু প্লেসি। সাকিব অসাধারণ ক্রিকেটার, অপরিচিত কন্ডিশনে পারফর্ম করতে পারে, তার না খেলা বাংলাদেশের জন্য বিরাট ক্ষতি ইত্যাদি বলে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত স্বীকারই করে ফেললেন, ‘আমি খুব খুশি যে সাকিব খেলবে না।’ প্রথম টেস্টের আগে একটা দুঃসংবাদও অবশ্য শুনতে হয়েছে স্বাগতিক দলকে। পিঠের সমস্যায় পেসার ভারনন ফিল্যান্ডার ছিটকে গেছেন পুরো সিরিজ থেকেই।
সাকিব বিশ্রামে, পচেফস্ট্রুমে সৌম্য সরকারের খেলার সম্ভাবনাও কম বলেই জানা গেছে। তাঁর কাঁধের আড়ষ্টতা এখনো আছে। তবে তামিম ইকবাল পুরোপুরি সুস্থ। সৌম্য না খেললে পচেফস্ট্রুমে তামিমের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ফিরবেন ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশ দলের ঘাটতি নেই কেবল এক জায়গায়—প্রস্তুতি। একটি প্রস্তুতি ম্যাচসহ গত ১০ দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় যা-ই অনুশীলন হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট।