
যাত্রা শুরু হলো দেশের দীর্ঘতম রেলপথ পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল। শনিবার সকালে পঞ্চগড় রেল স্টেশনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন।
এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম, পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহম্মদ গোলাম আযম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে পঞ্চগড় ষ্টেশন থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায় লাল সবুজের দ্রুতযান আন্তঃনগর ট্রেনটি। রেল বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুতযানের নতুন যাত্রীদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। রাত ৯টায় একতা এক্সপ্রেস নামে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়ে যাবে।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসেবে ৯৮২ কোটি টাকা ব্যায়ে দিনাজপুর-পার্বতীপুর-পঞ্চগড় ১৫০ কিলোমিটার রেল লাইন ডুয়েল গেজে রুপান্তর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের আওতায় গত বছরের ১৭ জুন রেলমন্ত্রী মজিবুল হক দুইটি শাটল ট্রেন উদ্বোধনের পর থেকে পঞ্চগড়ের যাত্রীরা দিনাজপুর হয়ে ঢাকা যাতায়াত করতেন। অবশেষে ৬৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো পঞ্চগড়ের মানুষের।
আন্তঃনগর ট্রেন পেয়ে আনন্দ র্যালি, সাংস্কতিক অনুষ্ঠানসহ দিনভর নানান আনন্দ উল্লাস কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন পর হলেও প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ায় জেলার মানুষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
পঞ্চগড় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে রেলপথে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার। দেশের দীর্ঘতম এ রেলপথে পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও হয়ে দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন নিয়মিত যাতায়াত করবে।
আপাতত কোন সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না। প্রতিদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং রাত ৯টায় একতা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে পঞ্চগড় স্টেশন ছেড়ে যাবে। এই দুই ট্রেনে ১৩টি করে বগি রয়েছে। একতা এক্সপ্রেসে ৮৯৪ এবং দ্রুতযানে মোট ৯৪৪টি করে আসন রয়েছে। এসব ট্রেনে এক হাজার ২০০ পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। তবে পঞ্চগড় জেলার জন্য দুই ট্রেনে মাত্র ৩৫টি করে শোভন চেয়ার, ৫টি এসি চেয়ার, দুই জনের একটি এসি বাথ এবং ৪ জনের নন এসি বাথ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা জেলার চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। এজন্য পঞ্চগড়ের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পঞ্চগড়-ঢাকা রেল যোগাযোগ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি অংশ। সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। এই রেল যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়নচিত্র পাল্টে যেতে পারে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই রেল যোগাযোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়েরর অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকা-পঞ্চগড় সরাসরি রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করা হলো। আগামীতে এই রুট বাংলাবান্ধা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। এর সম্ভাবতা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন।
ইতিবাচক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার। এক বছরের মধ্যে এর প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। ঢাকা-বাংলাবান্ধা রুটের মাধ্যমে আগামীতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে আমরা ভারত, নেপাল এবং ভূটান যাতায়াত করবো।
Be the first to comment