
হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে পরিচালক অনম বিশ্বাস নির্মাণ করেছেন সিনেমা। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমার প্রযোজক জয়া আহসান। শুটিং শেষে সিনেমাটি যখন মুক্তির অপেক্ষায় তখনই এই বির্তক উঠলো।
বিতর্কের শুরু হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শিলা আহমেদের এক আপত্তি নিয়ে। তিনি দাবি করেন, ‘দেবী’ অবলম্বনে সিনেমাটি তৈরি করা হলেও তাদের পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র মেহের আফরোজ শাওনের কাছে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
সিনেমাটি নিয়ে সাম্প্রতিক এ বিতর্ক এবং হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টির মেধাস্বত্বের বিষয় ব্যাখা করেছেন তার পুত্র নুহাশ হুমায়ূন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব বিষয়ের ব্যাখা দেন। নুহাশ প্রথমে ইংরেজী ও পরে বাংলায় এই ব্যাখ্যা লিখেছেন। তিনি যা লিখেছেন তা হুবুহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
দেবী’ নিয়ে কিছু কথা:
নিয়ম অনুযায়ী আমাদের অনুমতি ছাড়া দেবী সিনেমার কোন কাজই শুরু হতে পারেনা। তারপরও হয়েছে। কিন্তু যখন জয়া আহসান আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং আমাদেরকে তার দিকের ব্যাখ্যা দিলেন, তখন আমাদের মনে হয়েছে -এটা তার দিক থেকে একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল। আর তিনি যে এটা সংশোধন করতে চাচ্ছেন এটা একটা দায়িত্বশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু বেশিরভাগ নির্মাতারা (যারা আমার বাবার সৃষ্টি নিয়ে কাজ করেছেন/করতে যাচ্ছেন) এতটা দায়িত্বশীল আচরণের পরিচয় দেননি অথবা দিচ্ছেননা, তাই আমি কিছু জিনিস স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই- যেন এই জাতীয় ভুল বারবার না হয়।
অনেক নির্মাতাই আমাদের কে জানিয়েছেন তারা আমার বাবার স্ত্রী-মেহের আফরোজ শাওন কে এককালীন কিছু টাকা দিয়ে অনুমতি নিয়েছেন এবং নাটক নির্মাণ করেছেন। শাওন আমার বাবার ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির’ (গল্প, উপন্যাস, তার সৃষ্ট যেকোনো কিছু ) একমাত্র উত্তরাধিকার না। তাই আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি ছাড়া, শুধু মাত্র শাওনের অনুমতি নিয়ে, হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি নিয়ে কাজ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
কিছু নির্মাতার অজুহাত হল, ‘আপনাদের কে পাওয়া কঠিন’– আসলেই কি তাই? সিনেমা নির্মাণ করা একটা কঠিন কাজ হতে পারে, কিন্তু ঢাকা শহরে কোন মানুষের সাথে যোগাযোগের উপায় বের করা বেশ সহজ। আমার ফেইসবুক পেইজটা পর্যন্ত ভ্যারিফাইড, তাহলে আর কত সহজ উপায়ে আমার বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান?
আরেকটা সাধারণ ভুল ধারনা হোল- আমাদের চাচা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর অনুমতি নেয়া আর আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি নেয়া একই কথা। আমার মনে হয় এটা খুব স্পষ্ট করা দরকার- মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের চাচা এবং আমাদের প্রিয়জন, কিন্তু তিনি আমাদের কোন মুখপাত্র অথবা অভিবাবক না এবং হুমায়ূন আহমেদের ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির রাইট’ নিয়ে আমাদের চার ভাইবোনের হয়ে তিনি কিছু বলার অধিকার রাখেন না।
আশা করি আমার এই লেখাটি কিছু সাধারণ ভুল ধারনা দূর করবে, আর যেই সব নির্মাতারা আমার বাবার সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে চান, তারাও নির্মাণের আগে প্রয়োজনীয় আইনগত ধাপগুলো ভাল করে জেনে নিবেন। এটা হতে পারে মিসির আলী, হিমু অথবা আমার বাবার অন্য যেকোনো অনবদ্য সৃষ্টি – সেটা যাই হোক, এইসবই এখন অমূল্য সম্পদ আর তার উত্তরাধিকার(এবং তার সব ধরনের সৃষ্টির বিশাল ভক্ত) হিসেবে আমাদের দায়িত্ব খেয়াল রাখা এইসব যেন সঠিক আর মেধাবী নির্মাতার হাতে পরে।
আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে ‘না’ বলতে পারাটাও এখন আমাদের জন্য খুব জরুরি। আমি নিশ্চিত হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা তার কাহিনী নিয়ে তৈরি হাতে গোনা কয়েকটা অসাধারণ কাজই পছন্দ করবে, একশোটা মাঝারি মানের কাজের চেয়ে। আর আসলেই কি প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্ম কে সিনেমা অথবা নাটক বানানোর প্রয়োজন আছে? আমার বাবাতো এমনিই আমাদের বুকের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টির জন্য- তার কাহিনী নিয়ে নাটক বা সিনেমা নির্মাণ তো তার অবস্থান পরিবর্তন করছে না আমাদের কাছে।
জয়া আহসানের জন্য শুভ কামনা থাকল। আর আশা করছি অন্য নির্মাতারাও এটাকে সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখবেন, কিভাবে সবার জন্য সম্মানজনকভাবে আমার বাবার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি নিয়ে কাজ করা যায় । এটা কিন্তু কোন আর্জি না বা অনুরোধ না- ভালভাবে ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি’ আইন পড়ে দেখলেই বিষয়টি বোঝা যাবে।