
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে রেললাইন থেকে একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের (৫২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে খিলগাঁওয়ের বাগিচা মসজিদ সংলগ্ন রেললাইনে তার দ্বিখণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সুমন জাহিদের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ডান কানের ওপরে ও কপালে দুটি ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের কেউ হত্যার দাবি করেননি।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে লাশ সুমনের লাশ উদ্ধারকারী কমলাপুর জিআরপি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রেললাইনের বাইরের পাশের স্লিপারের ওপরে লম্বালম্বি লাশটি পড়ে ছিল। শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই-তিন হাত দূরে ছিল। ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে উৎসুক জনতা মাথাটা শরীরের কাছে এনে রাখে।’
তবে কোন ট্রেনে কাটা পড়ে তিনি মারা গেছেন বা কখন এ ঘটনা ঘটেছে তার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি বলেও জানান এএসআই আনোয়ার।
সুমন জাহিদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী ছিলেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে উত্তর শাজাহানপুরে থাকতেন তিনি। সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখায় কর্মরত ছিলেন।
হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম সাক্ষী, সুমন জাহিদ ক্রমাগত হুমকি পাওয়ায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে একটি পিস্তল কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
সুমন জাহিদের শ্যালক কাজী বখতিয়ার উদ্দীন বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার পর থেকে ক্রমাগত তিনি হুমকি পাচ্ছিলেন। সবশেষ একমাস আগে ফোনে ও বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।’ তবে জিডি নম্বর বা জিডি দায়েরের তারিখ বলতে পারেননি তিনি।
নিহত সুমন জাহিদের ছোট ভায়রা বুলবুল আহমেদ জানান, একমাস আগে তিনি হুমকি পেলে থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি আবার জানান। তখন পুলিশ তাকে বলেছিল, আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনি একটা পিস্তল কিনে ব্যবহার করুন।
শাজাহানপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কুমার জানান, সুমন জাহিদ গত বছর নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিলেন। জিডি নম্বর ৯১৪। ২১/৭/১৭ তারিখে জিডিটি করা হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, জিডি করার পর প্রত্যেক মাসে শাজাহানপুর থানার একটি টহল টিম সুমন জাহিদের ৩১২ নম্বরের বাসায় যেত। সর্বশেষ গত ২৮ মে তার বাসা পরিদর্শন করে আসে পুলিশ। এছাড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরেকটি জিডি (নং-৫৯৬) করা হয়েছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
Be the first to comment