মাদক: কঠোর অবস্থানে পুলিশ-র‌্যাব; চট্টগ্রামে দুই জন নিহত

police drive against drugs.jpg
মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযোন

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু করা ১০ দিনের এ অভিযান শেষে আগামী ২৬ মে পুলিশের সব বিভাগের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করা হবে। কোনো ইউনিট সফল হলে তাদের পুরস্কার দেওয়া হবে। ব্যর্থ হলে বা দায়সারা মনোভাবের প্রমাণ মিললে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে হবে।

এবারের অভিযানে রাজধানীর ৪৯ থানার জন্য পাঁচটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানের করণীর বিষয়ে দেশের সব ইউনিটকে অবহিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীতে মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত বরিশাল কলোনিতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের পাশে সদরঘাট থানার আইস ফ্যাক্টরি রোডে বরিশাল কলোনিতে বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে।

এর আগে ৪ মে থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এরই মধ্যে র‌্যাবের অভিযানে তিন মাদক ব্যবসায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। জব্দ করা হয় লাখ লাখ পিস ইয়াবা। সর্বশেষ গত বুধবার মধ্যরাতে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল হাসান ওরফে হাসান ঘাটিয়াল মারা যায়। এবার পুলিশও আলাদাভাবে বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিল।

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি। বৃহস্পতিবার থেকেই ১০ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, দালাল, অর্থলগ্নিকারী, মাদক ব্যবসার সহায়তাকারী, মাদকের উৎস ও গমনস্থল সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান চালানো হবে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বস্তি, মেস, আবাসিক হোটেল, নির্মাণাধীন ও পরিত্যক্ত ভবনে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার কথা বলা হয়। এ ছাড়া উঠান বৈঠক, চেকপোস্ট, তল্লাশিসহ দৃশ্যমান পুলিশি কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১০ দিনের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীদের পূর্ণ নাম-ঠিকানা ছক আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। গ্রেফতার ব্যক্তির সঙ্গে কার কার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে, তা জানানোর কথা বলা হয়। প্রত্যেক অপারেশনে জব্দ মাদকের পরিমাণ উল্লেখ করার নির্দেশনা রয়েছে। অভিযান সফল করতে সব বিভাগের ডিসি ও থানার ওসিরা সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারক করবেন।

কয়েকটি জেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বিশেষ অভিযান ঘিরে তৎপর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টার অভিযানের সর্বশেষ তথ্য সংশ্নিষ্ট ইউনিটপ্রধানকে অবহিত করতে বলা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অধিকাংশ অপরাধের নেপথ্যে রয়েছে মাদক। তাই সর্বাগ্রে তারা মাদক নির্মূল করতে চান।

গত কয়েক বছরে দেশে মাদক সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৮৪টি। ২০১৬ সালে ১৮ হাজার ২৮৭টি, ২০১৫ সালে ৪৬ হাজার ৫১২টি, ২০১৪ সালে ৪২ হাজার ১৯০টি, ২০১৩ সালে ২৯ হাজার ৩৪টি।

চট্টগ্রামে দুই জন নিহত

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহউদ্দিন আহমদজানান, মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ হিসেবে সেখানে অভিযানে গিয়েছিল তার বাহিনীর একটি দল। বলেন, বরিশাল কলোনি এলাকাটিতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছিল।

“র‌্যাবের একটি টহল দল সেখানে গেলে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। তখন র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।”

গোলাগুলি থামার পর দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় । পরে দেখা যায়, তারা দুজনই মারা গেছেন।
নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের একজনের বয়স ৫০ বছরের মতো, অন্যজনের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর।

নিহত একজনের হাতের পাশে একটি পিস্তল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্য জনের পাশে পড়ে ছিল দেশে তৈরি একটি বন্দুক। কিছু গুলির খোসাও পড়ে ছিল।

স্থানীয়রা জানায়, এই এলাকায় মাদকসেবীরা নিয়মিত আখড়া বসাত।

সর্বশেষ গত বুধবার সারদায় পুলিশ একাডেমিতে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাদক একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এর ভয়াল থাবা থেকে সমাজকে বাঁচাতে হবে। মাদক সেবনকারী, ব্যবসায়ী, উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’