সুন্দরবনের জন্য হুমকি ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত

বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে পবিবেশ অধিদপ্তর।। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান লাল শ্রেণিভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত।

এসব প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরুপ। অন্যগুলো কমলা ও সবুজ শ্রেণিভুক্ত। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা এক প্রতিবেদন এ তথ্য উঠে এসেছে।

আগামী ৯ মে এ প্রতিবেদনের ওপর আদেশ দেয়া হবে বলে দিন ধার্য করেন আদালত।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৩ আগষ্ট হাইকোর্ট সুন্দরবনের আশপাশে নতুন শিল্প-কারখানা অনুমোদনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সঙ্গে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে কতগুলো শিল্প কারখানা রয়েছে, তার তালিকা দাখিলে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমোদন কেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৯ সালের ৩০ আগষ্টের প্রজ্ঞাপনের লংঘন হবে না এবং নতুন শিল্প কারখানা কেন অপসারণ করা হবে না -তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার আদালত বলেছেন, ১৯৯৯ সালের ৩০ আগষ্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকায় লাল শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই। কারণ এগুলো মাটি, পানি ও বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত করে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে ইউনসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশ দূষণ যাতে ভয়াবহ রূপ নিতে না পারে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য যাতে কোনো প্রকার নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এ লক্ষ্যে পূর্ব সতকর্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৯৯ সালের ৩০ আগষ্ট সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চতুর্দিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

দাপ্তরিক নথি পর্যালোচনা ও সরেজিমনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় সর্বমোট ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। বাগেরহাট জেলায় ৭৮, খুলনায় ৯২, সাতক্ষীরায় ২০টি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ।

২৪টি লাল শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, রেড জোনে যেগুলো সেগুলো সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য রেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে রুল শুনানির সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার। তাহলে এগুলো বেরিয়ে আসবে কতটুকু ক্ষতিকর। যে পর্যন্ত এটা করা যাবে না, সে পর্যন্ত বলা যাবে না যে এটা বাস্তবে ক্ষতিকর।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের ১০ কিলোমটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী (লাল শ্রেণির) শিল্প প্রতিষ্ঠান ২৪টি।

এই ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারবে না।