
রাখাইন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। তিনি সুবিধা মত সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদজ্জামান খান কামাল।
মিয়ানমার সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার সকালে নেপিদোতে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। দুদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ।
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সকালে মিয়ারমারের নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। সেখানে ‘আন্তরিক পরিবেশে’ প্রায় এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে কথা হয়।
“অং সান সু চি বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও তার সরকার কাজ করছে।”
অপু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বৈঠকে সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
“সু চি দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।”
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনের বেশ কিছু সেনা ও পুলিশ চৌকিতে একযোগে হামলা হয়। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এ হামলার দায় স্বীকার করে।

২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের কক্সবাজারে আসা এই শরণার্থীদের মুখে মুখে সেনা ও সহযোগীদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের গল্প।
আগস্টে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে দীর্ঘ নীরবতায় আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। এরপর মুখ খোলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বক্তব্য দেন তিনি।
‘অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ আছে এবং আমাদের সবই শুনতে হবে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে এই অভিযোগগুলো যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে কি না, তা আমাদের নিশ্চিত হতে হবে’, বলেন সু চি।
একসময় গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়ানো সু চি বলেন, তাঁর উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশে সমস্যাটা শুধু রাখাইন রাজ্যে নয়, আরো বহু জটিলতার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক বলেন, ‘আমরা নতুন (গণতন্ত্র) ও ভঙ্গুর দেশ, যাতে বহু সমস্যা রয়েছে। তবে আমাদের এর সবগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে।’ অল্প সময়ের মধ্যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন বলেন মন্তব্য করেন সু চি। তিনি বলেন
‘আমাদের শুধু নির্দিষ্ট একটি এলাকা বা অল্প কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিলে হবে না। গোটা মিয়ানমার ও এর জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’ বলেন সু চি ।
রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে প্রবেশ করেছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সবি মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।