রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জি-৭ আউটরিচে হাসিনার চার প্রস্তাব

জি-৭ আউটরিচে শেখ হাসিনা

জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার কানাডার কেবেকে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টিন লগার্দও ছিলেন সেখানে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবগুলো-

০১. জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে রাজি করাতে হবে।

০২. মিয়ানমারকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে রাখাইন পরামর্শক কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে করতে হবে।

০৩. রাখাইনে নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য কাজ করতে হবে।

০৪. রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অমানবিক নিপীড়ন বা মানবাধিকার লংঘনের জন্য জবাবদিহি ও বিচার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চার লাখের মতো মানুষ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। এরমধ্যে গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে আরও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্র সই করে বাংলাদেশ। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।

রপর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হলেও এখনও কেউ রাখাইনে ফিরতে পারেনি।
এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এ কথাটি আগেও বলেছি, আবার বলছি রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারে, মিয়ানমারকেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে, যেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করে আসছে।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আমরা এর সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত রেখেছি।”

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করা এবং বারবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল থামাতে মিয়ানমার সরকারের উচিত কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে জি-৭ দেশগুলোর কাছ থেকে।”

প্রায় ১১ লাখ মিয়ানমারের নাগরিকের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “নিজেদের দেশে জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি হয়ে রোহিঙ্গারা তাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের জনগণ তাদের ঘরবাড়ি খুলে দিয়েছে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করেছে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সামালে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে উদারভাবে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা সরবরাহ করেছে। ১২২টি স্থানীয়, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে।”
এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

Be the first to comment

Leave a Reply