নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ থেকে অভিজ্ঞতা নেয়ার পরামর্শ

মুল অধিবেশনের আাগে সংবাদ সম্মেলন

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ রোল মডেল। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে এ ইস্যুতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কমনওয়েলথ।

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের শীর্ষ বৈঠক উপলক্ষে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রাক অধিবেশনগুলোর অর্জন জানাতে বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের হেড অব জেন্ডার এমিলিয়া সিয়ামমুয়া নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিতে এ ইস্যুতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘লিঙ্গ সমতা’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে বাংলাদেশের এই সাফল্য অবশ্যই অনুপ্রাণিত করবে। ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ সংগ্রামে বাংলাদেশের এই সাফল্য থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭।

মঙ্গলবার কমনওয়েলথ ওমেন্স ফোরামের ‘ক্ষমতায়নে শিক্ষা: কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারীর জন্য গুণগত মানের প্রাথমিক ও বাস্তবভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সমতা আনয়ন শীর্ষক’ এক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর সক্ষমতায় বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প শোনান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সাফল্যের গল্প শুনে অধিবেশনের ডেলিগেটরা করতালির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করেন।

অধিবেশন শেষে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেলিগেটরা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরে বাংলাদেশের এ অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করতে থাকেন।

‘ক্ষমতায়নে শিক্ষা: কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারীর জন্য ‘গুণগত মানের প্রাথমিক ও বাস্তবভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সমতা আনয়ন শীর্ষক’ ঐ অধিবেশনের বক্তব্যে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের দীর্ঘ প্রচেষ্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংসদ হচ্ছে দুনিয়ার একমাত্র সংসদ, যেখানে সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা ও উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা সবাই নারী। আমাদের পুরুষ সদস্যরা খুবই উদার’।

লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় জায়গায় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসাবে, ১৪৪টি দেশের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

বাংলাদেশে সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর কাজ করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনাবলেন, বিমান চালনা, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোয় বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘ শান্তি মিশন, এভারেস্ট জয় ও দেশে-বিদেশে খেলাধুলায় সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া পদক্ষেপের কথা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

নারী শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা, ২৮ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা, ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুলে মেয়ে-ছেলে অনুপাত ৫৩ : ৪৭, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫ :৬৫। গত নয় বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ হয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।