প্রধান বিচারাপতিকে নিয়ে কূটনীতিকদের কাছে বিএনপির নালিশ

বিএনপির দলীয পতাকা

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘অসুস্থ দেখিয়ে জোর করে’ ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলাদেশে দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের ‘লেক শোর’ হোটেলে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কূটনীতিকদের কাছে প্রধান বিচারপতির বিষয় নিয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে, তুরস্ক, আরব আমিরাত, মরক্কো, ভিয়েতনাম, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২৩ থেকে ২৪টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তাও ছিলেন বৈঠকে।

বৈঠকটি গোপনীয়ভাবে করায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সূত্র মতে, বৈঠকে প্রধান বিচারপতি ও রোহিঙ্গা ইস্যু, চলমান রাজনীতি এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, বৈঠকে প্রধান বিচারপতির হঠাৎ ছুটির বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিযে আলোচনা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়।

বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমীন ফারহানা বলেন, প্রধান বিচারপতির জোর করে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টিতে কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের ব্রিফিং ছিল। উনাকে (প্রধান বিচারপতি) জোর করে ছুটিতে পাঠানো হলো এ বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেছি।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাবার পথে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা মনে করি, তিনি অসুস্থ নন। তাকে যে বাধ্যতামূলক জোরপূর্বক ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে সেটি বলেছি।”

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি এস কে সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। একমাসের ছুটি নিয়ে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এক মাসের অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার খবর জানান অ্যাটর্নি জেনারেল, পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একই কথা বলেন।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, রায়ের কারণে ‘চাপ দিয়ে’ প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের যে দরখাস্ত দেখিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারা। ওই চিঠিতে প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষর ‘জাল’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মওদুদের।

বৈঠকে কূটনীতিকদের কাছে নাশকতার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং তাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের ও গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গও তোলেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন