রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোনের প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র মনে করে বিএনপি

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিএনপির আলোচনা

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে সুরক্ষা বলয় (সেইফ জোন) গড়ার যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মিয়ানমারের গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের এই অবস্থানের কথা জানান।

তিনি বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে সেইফ জোন সম্পর্কে একটা কথা বলেছেন। এটাকে তিনি পরিষ্কার করেননি। এটা হবে আমাদের বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, ভয়ংকর, বিপদজনক ও স্বার্থবিরোধী। এই সেইফ জোন কনসেপ্টকে সম্পূর্ণভাবে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

তিনি বলেন ,“আমরা অনুরোধ জানাব, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সেইফ জোন সম্বন্ধে যেন আর কোনো ধরনের কথা-বার্তা না হয়। আমরা একে ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই।”

মিয়ানমারে উৎপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় শেখ হাসিনা শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, যাতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের জন্য সুরক্ষা বলয় (সেইফ জোন) গড়ার প্রস্তাবও রয়েছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাখ্যান করা দুখঃজনক। এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। এজন্য জাতীয় ঐক্যের দরকার।

বিএনপি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। কারণ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়েও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন তাদের ফেরত পাঠিয়ে নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে।’

জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীনরা দলীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় আন্তর্জাতিক মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা মিয়ানমারে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্ব দিয়ে এখনও রেজুলেশন নিতে পারেনি। আশা করি, তারা এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে মানবিক বিপর্যয় সমাধান হয়।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে। সমগ্র বিশ্ব সোচ্চার হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় ইস্যুতে সরকার জাতীয় ও বিশ্বকে একত্রিত করলেও এখন উল্টো আমাদের, সরকারকে একত্রিত করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এখন কোন অবস্থানে আছে সেটি পরিষ্কার নয়। লোক দেখানোর কারণে সরকার অবস্থান নিয়েছে।’

‘সেফ জোন’ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সেফ জোন কোথাও কখনও কাজ করে না। কোনো দেশেই কাজ করেনি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত-চীন-রাশিয়ার বিতর্কিত ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে খসরু বলেন, ‘এই অঞ্চলের যারা বড় শক্তি তারা এক্সক্লুসিভ জাতির পক্ষে কাজ করছেন। যদি ক্ষমতাধররা এই কাজ করেন তবে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এটি শুধু মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

মিয়ানমারের সঙ্গে হওয়া আগের চুক্তিগুলো ভিত্তি ধরে কাজ শুরু করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘১৯৭৮, ৯৩ ও ২০০৫ সালেও এই সংকট দেখেছি। আন্তর্জাতিক চাপ দিয়ে বার্মিজ সরকারকে বোঝাতে হবে রোহিঙ্গারা যতই ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হোক না কেন তাদের নির্মূল করা যাবে না। এটা করা গেলে অনেকাংশে সংকট কমে যাবে। সেফ জোনের কথা বলে ছাড় দিলে চলবে না।’

সেমিনারে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জাপান, কুয়েত, ইরান, ফ্রান্স, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও নেদারল্যান্ডসহ মোট ১২টি দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা অংশ নেন। তবে এতে চীন, ভারত এবং রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, ব্যারিস্টার নওশাদ জামিল ও এম মোর্শেদ খান।

 

Be the first to comment

Leave a Reply