
মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সেনা অভিযানে নির্বিচার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা চলছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার যাইদ বিন রাআদ আল হুসাইন।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস সেনা অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান।
যাইদ বলেন, গত মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে বিদ্রোহীদের হামলার পাল্টায় যে অভিযান চলছে তা ‘স্পষ্টতই বাড়াবাড়ি’। গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবরের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আরও অনেকে সীমান্তে আটকা পড়ে আছে।
“এই পরিস্থিতিকে জাতিগোষ্ঠী নিপীড়নের একটি জলন্ত উদাহরণ বলেই মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেস, আমরা স্যাটেলাইটের অনেক ছবি পেয়েছি যেখানে দেখো যাচ্ছে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দিচ্ছে।নির্বিচারে মানুষেকে গুলি করে হত্যা্ করছে।
মিয়ানমার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে অসংখ্য ভূমি মাইন পুতে রেখেছে। কেউ ফিরতে চাইলে তার পরিচয় চাইছে। রোহিঙ্গাদের্ জাতীয় পরিচয় ও নাগরিক্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন যাইদ।
মিয়ানমারের সরকারকে চলমান নৃশংস সামরিক অভিযান বন্ধ করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য জবাবদিহি করার আহ্বান জানান জাতিসংঘ দূত।
“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় গত দুই সপ্তাহে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংস্থাটির সদর দপ্তরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ইউএনসিএইআর জানায়, বাংলাদেশের কক্সবাজারে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষের ঢল আসার আগে প্রায় ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস ছিল। দুই সপ্তাহে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে সংখ্যাটি, ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আরো বলা হয়, বিপুলসংখ্যক মানুষের বেশির ভাগই নারী, নবজাতক, মা, শিশুসহ পরিবার। তারা খুব অসহায় অবস্থায় এসেছে, পরিশ্রান্ত, ক্ষুর্ধাত এবং হন্যে হয়ে আশ্রয় খুঁজছে।
গত ২৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের হামলা এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পাল্টা হামলার পর থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। মিয়ানমার বলছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলা চালায়। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর ত্রাণকর্মীরা নতুন নতুন জায়গায় পরিদর্শনের অনুমান করেন নতুন আসা শরণার্থী আরো বাড়বে। শরণার্থী শিবির ও তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্পে এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধন করেছে।
ইউএনসিএইচআর জানায়, বেশির ভাগ এসেছে হেঁটে। কয়েকদিন ধরে জঙ্গল, পাহাড় পেরিয়েছে। হাজারো মানুষ উত্তাল বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দিচ্ছে।
Be the first to comment