সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন শেখ হাসিনা

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ও বিক্ষোভের মধ্যে বুধবার বিকালে সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে চলমান অস্থিরতার প্রসঙ্গটি তুলে সরকার প্রধানের জবাব জানতে চান। এরপর বক্তব্যের প্রায় প্রতিটি ছত্রে চলমান আন্দোলন নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, “বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মিটাবার জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল; পরিষ্কার কথা; আমি এটাই মনে করি, সেটা হল বাতিল।”

আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দুদিন আগে বৈঠক করলেও প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে বুধবার সকালে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কথা বলবেন।

আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীদের এবার ঘরে ফিরে যেতে বলেন তিনি। আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলাকার জন্য দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার কথাও তিনি বলেন। ফেইসবুকে এক ছাত্রের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে উসকানির কথাও বলেন তিনি।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

বক্তব্যে কোটা কেন রাখা হয়, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে থাকা জনপদের মানুষদের তুলে আনতে এই কোটা ব্যবস্থা।

সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে অনগ্রসরদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে; তা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

কোটা না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের কথাও বলেন শেখ হাসিনা, তবে সেটা কীভাবে তা ব্যাখ্যা করেননি।

তিনি শুধু বলেন, “যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী তাদের অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারব।”

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছে। তারা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানায়।

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর সাংবাদিকদের বলেন, তারা রাতে বসে এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত জানাবেন।

তার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।

গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার আন্দোলনকারীরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের পিটিয়ে তুলে দেওয়ার পর আন্দোলন বেগবান হয়। তারপর থেকে প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ।

কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীদের নেমে আসার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এরাও চায় না, ওরাও চায় না। ঠিক আছে; কোটাই থাকবে না। কোটার দরকারই নাই। বিসিএসে যাবে, পরীক্ষা হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে।”

স্বাধীনতার পর কোটা পদ্ধতি চালুর পর বিভিন্ন সময় তা সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বিরক্তিভরে বলেন, “কোটা থাকলেই সংস্কার। না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নেই। আন্দোলন হলে সময় নষ্ট হবে।

কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।”

জনদুর্ভোগ অবসানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের এখন ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আন্দোলনটা কী, সমস্ত লেখাপড়া বন্ধ করে রাস্তায় বসে যাওয়া। হাসপাতালে মানুষ যেতে পারে না। ঢাকার বাইরে সবাই রাস্তায় নেমে গেছে। আন্দোলন যথেষ্ট করেছে, এবার তারা ক্লাসে ফিরে যাক।

“কয়েকদিন ধরে সমস্ত ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্লাস বন্ধ। পড়াশোনা বন্ধ। তারপর আবার ভিসির বাড়ি আক্রমণ। রাস্তাঘাটে যানজট। সাধারণ মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন?”

প্রয়োজনে কমিটি

কোটা তুলে দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের সুযোগ থাকার কথাও বলেন।

“যদি দরকার হয় আমাদের কেবিনেট সেক্রেটারি তো আছেন। আমি তো তাকে বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে তারা কাজ করবেন। সেটা তারা দেখবেন।”

এই আন্দোলন শুরুর পর সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক জনসভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে।

“মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বিধায় তাদের অধিকার সবার আগে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবাই সর্বাগ্রে অধিকার ভোগ করবে। সে কারণে চাকরিতে আমরা কোটার ব্যবস্থা করেছি।”