পালিয়ে আসার পথেই সন্তান প্রসব করলেন এক রোহিঙ্গা নারী

সানোয়ারা বেগম থাকতেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যর মংডু শহরের বাঘঘোনা গ্রামে। পরিচয় রোহিঙ্গা। যখন তাঁর গ্রামে নিপীড়নের খড়্গ নেমে আসে, তখন চার সন্তান নিয়ে বাঁচতে পাশের ধান খেতে গিয়ে লুকান। স্বামী যে তখন কোথায় জানেন না সানোয়ারা। এ সময় মিয়ানমারের সেনারা ধান খেতে লুকিয়ে থাকা লোকজনকে লক্ষ্যে করে গুলি ছোড়ে। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না সানোয়ারা। মাটিতে শুয়ে পড়েন। পেটে চাপ লাগছে। মনে ভয়। অন্তঃসত্ত্বা এই মা কী পারবেন তাঁর অনাগত সন্তানকে আলোর মুখ দেখাতে।

এরই মধ্য সানোয়ারার স্বামী উসমান খুঁজে পান স্ত্রী ও সন্তানদের। এবার তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সীমান্ত। কিন্তু সানোয়ারার হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কারণ সানোয়ারার প্রসবের দিন ঘনিয়ে এসেছে। যাই হোক তারা সীমান্তে এসে নৌকা পেয়ে যান। জনপ্রতি তিন হাজার টাকা দিয়ে নাফ নদী, এরপর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় গোলার চরে ওঠেন। তখন ঘড়ির কাটায় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।

সানোয়ারা বলেন, সমুদ্র ও নদীর তীব্র ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে নৌকায় পাড়ি দিয়েছেন তিন ঘণ্টা। এরপর হাঁটতে হয়েছে প্রায় আট কিলোমিটার। হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটু একটু পেটে ব্যথা শুরু হয়। টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছানোর পর তিন রাস্তার পাশে বসে পড়েন। তীব্র প্রসব বেদনা শুরু হয়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। আশ্রয় মেলে স্থানীয় নুরুল হকের বাসায়। রাত ১২টায় ফুটফুটে এক শিশুর জন্ম দেন তিনি। নাম রাখেন ইয়াসের।

আজ রোববার সকালে সানোয়ারার স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের অটোরিকশা করে টেকনাফের লেদায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ে আসেন। সেখানে সেখানকার বাসিন্দা মদিনা খাতুনের ঘরে (ব্লকের ২০৩ নম্বর) তাদের আশ্রয় মেলে।
মদিনা খাতুন বলেন, ছোট্ট বাচ্চা। তাই মানবতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েছি। তবে এক সপ্তাহের বেশি হয়তো রাখতে পারব না।

Be the first to comment

Leave a Reply