
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে আগে কোকো-১, ২ নামে জাহাজ বেরিয়েছে। এখন বের হচ্ছে শপিং মল, ফ্ল্যাট, হাজার হাজার কোটি টাকার খবর। বাংলাদেশের ব্যাংকের থেকে ৯৫০ কোটি টাকা যারা লুটে নিয়ে গেছে, তারা আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাওয়ার, রাজনীতি করার।
যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার পরিবারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আর কোনো দিন তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠাবে না জনগণ।
বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ এই স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজ, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদদানকারী; এদেরকে কখনও বাংলাদেশের মানুষ ভোটও দেবে না, এরা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতেও পারবে না।”
দেশের জনগণের কাছে শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, “যারা এই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি চান, যারা এই দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি চান, উন্নতি যারা চান; তারা কি কখনও ওই যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করা বা তাদেরকে মন্ত্রী বানানো বা যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, তাদের সমর্থন করতে পারে? না ভোট দিতে পারে?
“তাদের ভোট দিতে পারে না। তাদেরকে সমর্থন করতেও পারে না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বিদেশে অর্থ পাচারের দায়ে আদালতের সাজার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কাজেই কোন মুখে তারা জনগণের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। কোন মুখে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইবে।”
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনা করে তিনি বলেন, “যারা সৃষ্টি করে, যারা ত্যাগ স্বীকার করেন, তাদের যে দরদ থাকে, তাদের যে আন্তরিকতা থাকে, সেটা কিন্তু ওই উড়ে এসে ক্ষমতায় জুড়ে বসা আর ক্ষমতা দখলকারীদের থাকে না। তারা ভোগ বিলাসে জীবন কাটায়। তারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের কথা তুলে ধরেন।
“পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়। যারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকেও ফেরত আনা হয়।
“কী দুর্ভাগ্য এদেশের! যারা যুদ্ধ করল, যারা রক্ত দিল, তারাই অপরাধী হয়ে গেল! আর যারা হানাদার পাকিস্তানিদের দালালি করল, যারা গণহত্যা চালাল, যারা মা-বোনদের ধর্ষণ করল, তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হল।”
আর এটা বসিয়েছিল কে- এ প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, “সেও একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাকে বড় খেতাবও দেওয়া হল। ছিল একটা মেজর। জাতির পিতাই তাকে প্রমোশন দিয়ে দিয়ে বানালো মেজর জেনারেল। সেই বেঈমান, মোনাফেক জিয়াউর রহমান; সেই এদেরকে (যুদ্ধাপরাধী) প্রতিষ্ঠিত করল বাংলার মাটিতে।”
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করা এবং দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করার ঘটনাও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
“জিয়াউর রহমান একাই না। জিয়া, এরশাদ সবাই মিলে এদের (স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী) খোশামোদি করেছে। তারপর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও একধাপ উপরে উঠল। এদেরকে নিয়ে তার দহরম-মহরম। এদের হাতে তুলে দিল লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা।”
যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়াদের সন্তানদের নিয়ে দলগঠন করায় বিএনপির সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।
“আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে এলাম, তখন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। মসজিদে আগুন দেওয়া, কোরআর শরীফ পুড়িয়ে ফেলা, গাছ-রাস্তা কেটে ফেলা; কী না করেছে একটা দেশকে ধ্বংসের জন্য। আমরা গড়ে তুলি, ওরা ধ্বংস করে। এইভাবে তারা এদেশকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তারা করেছে।
“আর এই আগুন লাগাচ্ছে কারা? ওই বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারেরা। হুকুমদাতা কে? হুকুম দিচ্ছে খালেদা জিয়া। পরামর্শ কে দিচ্ছে? উনার এক কুলাঙ্গার ছেলে যে অর্থ পাচারে সাজাপ্রাপ্ত, দুর্নীতি গ্রেনেড হামলাসহ যত অপকর্মের সাথে জড়িত।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে শাহীন রেজা নূর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর, ওয়ার্ড নেতারা অংশ নেন।