
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় গত সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু পেয়াজ নয় বেড়েছে সব ধরনের সব্জির দাম। আর পেয়াজের দাম নিয়ে রীতিমত চলছে তেলেসমাতি। আয় ব্যয়ের মধ্যে হিসেব মেলাতে না পেরে রীতিমত হাসফাস করছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০-৬০ টাকায় । এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজের মতো প্রায় সব সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বরাবরের মত দরবৃদ্ধির জন্য সরবরাহ ক্ও মে আসাকে দুষছেন ব্যবসায়িরা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বেড়েছে।
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে এই দাম বেড়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা লাগছে। ফলে আমাদের বাজারেও আমাদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আর ভারতে দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশি পণ্যেরও দাম বেড়ে যায়। তাই দেশি পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০, বেগুন ৬০-৮০ ও প্রতি কেজি পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে প্রতি কেজি বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, শিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমলেও অন্য সব সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। তরিতরকারির মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থাত ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাচা পেপে। এদিক দিয়ে অপরিবর্তিত রয়েছে আলুর দাম। গত সপ্তাহে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি আলু চলতি সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে। তবে এগুলো আগাম জাতের হওয়ায় দাম বেশি। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে দাম কিছুটা বেশি।
কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত পাঁচ-ছয়দিন ধরে বাজারে তুলনামূলক কম পরিমাণ সবজি আসছে পাইকারি আড়তগুলোতে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এটিকেই দায়ী করছেন তিনি।
এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশে ইলিশ ধরা ও বাজারজাত আবারো শুরু হয়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ। গতকাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজারে ৮০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ৪৫০-৪৮০ টাকা।
অন্যদিকে চালের বাজারে স্বস্তি ফিরে না এলেও বেড়ে যা্ওয়া দামে অনেকটাই স্থির রয়েছে। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রনের অংশ হিসেবে নতুন করে আরো আড়াই লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া কম্বোডিয়ার কাছ থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হওয়ার পর ঋণপত্র খোলা হয়েছে। আর মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের গুদামে তিন লাখ ৯৬ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৩ হাজার টন গমসহ মোট খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ চার লাখ ৯৯ হাজার টন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় প্রতি কেজি সরু চাল ৫৮-৬৫ টাকা, সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট ৫৮-৬০, উন্নত মানের নাজির ও মিনিকেট ৬০-৬৫, মাঝারি মানের চাল ৪৮-৫২, সাধারণ মানের পাইজাম ও লতা ৪৮-৫২, উন্নত মানের পাইজাম ও লতা ৫২-৫৫ ও প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৮ টাকায়। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, সপ্তাহ ব্যবধানে মোটা চালের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও মিনিকেট ও নাজির চালের দাম কমেছে কেজিতে ২-৩ টাকা।