আড়াই দিনেই ম্যাচ শেষ; ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা

দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ লজ্জায় ফেলেন রাবাদা

প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা রানের পাহাড় গড়ার পরই বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের ইঙ্গিতটা পাওয়া গিয়েছিল। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে প্রথম ইনিংস শেষেই ফলো অনে পড়া বাংলাদেশের হারটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।

তারপরও কিছুটা লড়াইয়ের আশায় বুক বেধেছিলেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। । পচেফস্ট্রুমের মতো এখানেও অসহায় আত্মসমর্প করে টাইগারদের। রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন বাংলাদেশকে ইনিংস ও ২৫৪ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

পচেফস্ট্রুম টেস্টে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ০-২ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় মুশফিকের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার একক আধিপত্যে পাঁচদিনের টেস্ট আড়াই দিনেই শেষ হয়।

রানের হিসেবে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার এটাই সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ২০০১ সালে কেপটাউন টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংস ও ২২৯ রানে জিতেছিল প্রোটিয়ারা।

ব্লুমফন্টেইন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান তোলে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪২৬ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে মাহমুদউল্লাহ সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। এছাড়া ইমরুল ৩২, মুমিনুল ১১, মুশফিক ২৬ ও লিটন দাস করেন ১৮ রান। সৌম্য সরকার ৩, সাব্বির রহমান ৪ এবং তাইজুল আউট হন ২ রান করে।

প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া ক্যাগিসো রাবাদা দ্বিতীয় ইনিংসেও নেন পাঁচটি উইকেট। এছাড়া আন্দিলে ফেলুকওয়াইয়ো তিনটি এবং ডোয়াইন অলিভিয়ে ও ওয়েন পারনেল নেন একটি করে উইকেট।

শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে একটা সময় ৪ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভয়াবহ ব্যাটিং ধস সঙ্গী হয় টাইগারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ৩৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে লজ্জাজনক হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। এরমধ্যে মোস্তাফিজ (৭) ও শুভাশিষ রায় (১২) শেষ উইকেট জুটিতে ১৬ রান তোলেন।

রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই দলীয় ১৩ রানের মাথায় ক্যাগিসো রাবাদার বলে দ্বিতীয় স্লিপে ফাফ ডু প্লেসিসের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মুমিনুল। তবে তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। রাবাদার করা নবম ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ স্কয়ার লেগে কেশব মহারাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে সৌম্যকে অনুসরণ করেন মুমিনুল। তার বিদায়ের পর ইমরুলের সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন মুশফিক।

শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর দারুণ খেলছিলেন ইমরুল-মুশফিক। তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি এই জুটি। ডোয়াইন অলিভিয়ের করা ১৬তম ওভারে লেগ সাইডের বাইরের বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল। ইমরুলের বিদায়ের পর ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ।

এই দুজন দারুণই খেলছিলেন। তবে মুশফিক নিজের ভুলেই উইকেট ‘উপহার’ দিয়ে ফিরে গেলে ফের চাপের মুখে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পারনেলের করা ২৪তম ওভারের চতুর্থ বল প্যাড দিয়ে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। বল লাইন মিস করে বেরিয়ে যাবে বলেই ভেবেছিলেন তিনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়ররা জোরালো আবেদন করলে তাতে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মুশফিকের।

মুশফিকের বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও লিটন। তবে বোকামির খেসারত দিয়ে লিটন ফিরে গেলে সেই প্রতিরোধ ভেঙে যায়। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় আন্দিলে ফেলুকওয়াইয়োর করা ৩৩তম ওভারে পঞ্চম বল ছেড়ে দিতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। রাবাদার করা পরের ওভারের শেষ বলে ‘গালি’ অঞ্চলে ডিন এলগারের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

ক্রিজে নামতে না নামতেই যেন সাজঘরে ফেরার তাড়া পেয়ে বসে সাব্বিরকে। ফেলুকওয়াইয়োর করা ৩৭তম ওভারের শেষ বলে দ্বিতীয় স্লিপে ডু প্লেসিসকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির। এরপর বাংলাদেশ শিবিরে হানা দেন রাবাদা। তার করা ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাইজুল ইসলামের স্টাম্প ছত্রখান হয়ে যায়।

এক ওভার পর আক্রমণে এসে ফের বাংলাদেশ শিবিরে হানা দেন রাবাদা। তার করা ৪০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রুবেল বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ইনিংস পরাজয় থেকে এক উইকেট দূরে অবস্থান করে বাংলাদেশ। এক উইকেট হাতে নিয়ে পানি পানের বিরতিতে যায় সফরকারীরা। বিরতির পর মোস্তাফিজ বোল্ড হয়ে গেলে ইনিংস পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।