সেীদিতে একই দিনে তিন ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছে আরব বিশ্ব

সেীদিতে একই দিনে তিন ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছে আরব বিশ্ব

একই দিনে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সেীদি আরবে ঘটে গেলো পরপর তিনটি বড় ঘটনা। সবগুলো ঘটনারই কেন্দ্রস্থল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ। শনিবারের হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই তিনটি ঘটনায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে আরিব বিশ্বসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্য।

নাটকীয়তার শুরু হয় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি জীবনের শঙ্কা প্রকাশ করে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। নিজের দেশ ছেড়ে রিয়াদে বসে তিনি পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই রিয়াদের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে যা নাড়িয়ে দেয় সৌদি আরবকে।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্য রাতে ঘটলো যেন আরও এক বোমার বিস্ফোরণ । এবার ঘটাল খোদ সৌদি আরব। রাজকীয় এক ডিক্রিতে বেশ কয়েকজন প্রিন্স, সাবেক মন্ত্রী, ধনাঢ্য ও সুপরিচিত ব্যক্তিকে আটকের পাশাপাশি সরকারের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দটি ছিল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের শব্দ। অভিযোগ রয়েছে, ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহের মিত্র, যাঁর আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মৈত্রী রয়েছে।

ইয়েমেনে হুতি দমনে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রিয়াদ। ধারণা করা হচ্ছিল, হুতিরা হয়তো দুর্বল হয়ে এসেছে। কিন্তু শনিবারের ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনাটি সত্যি হয়ে থাকলে ইয়েমেন যুদ্ধের যে এখনই কোনো সম্ভাব্য সমাপ্তি দেখছেন না বিশ্লেষকেরা।

আর মধ্যরাতে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের জারি করা ডিক্রির পর আটক ও বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাগুলোকে মনে করা হচ্ছে শাসনব্যবস্থায় তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। আটক ও বরখাস্তদের তালিকায় প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর কয়েকজন সন্তান রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রিন্স মিতেব বিন আবদুল্লাহ সৌদি আরবের ন্যাশনাল গার্ড বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সাদ হারিরির পদত্যাগ, হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া এবং সবশেষে প্রিন্সদের আটক ও বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা শুধু সৌদি আরবেই নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সাদ হারিরির পদত্যাগ আঞ্চলিক সরকারগুলোর কানে অশনিসংকেত হয়েই বাজার কথা, অন্ত:ত যারা আর যুদ্ধ চায় না।
ইয়েমেনে অভিযানের জন্য সৌদি আরবকে কোটি কোটি ডলার গুনতে হয়েছে। সানার ‘ন্যায়সংগত’ সরকারকে প্রতিষ্ঠা এবং ইরানকে নজরদারিতে রাখতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনা ছিল এটি। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। প্রাণ গেছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর রক্ষক হিসেবে ইরানকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে এই পরিকল্পনা।

সব পদক্ষেপের পেছনের কারণ পরিষ্কার হলেও শনিবারের গণগ্রেপ্তার ও বরখাস্তের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান এবং সৌদি সিংহাসনের একসময়ের উত্তরাধিকারী মিতেব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ যুবরাজ বিন সামলানের নিয়ন্ত্রণকে আরো প্রতিষ্ঠিত করা।

তবে প্রিন্স মিতেবের চেয়েও বড় ধাক্কা ছিল ধনাঢ্য প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালের আটক হওয়ার ঘটনা। অথচ প্রিন্স বিন তালাল ও যুবরাজ বিন সালমানের দৃষ্টিভঙ্গি একই। বিশেষত, তাঁরা দুজনই সৌদি আরবে মধ্যপন্থী সমাজব্যবস্থার পক্ষে। দুজনই গণতন্ত্র ও উদারনীতির বিপক্ষে।

৩২ বছর বয়সী যুবরাজ বিন সালমানের কার্যক্রমে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)। কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে ইয়েমেন ঘুরে দাঁড়ানোও এখন সুদূর পরাহত। মিসর তো টাইম বোমার ওপর বসে আছে দীর্ঘদিন থেকেই।

সাদ হারিরির পদত্যাগের পর লেবানন অস্থির হয়ে উঠতে পারে। কাজেই আাগামীতে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ যথেষ্ট আছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: আল জাজিরা