রোহিঙ্গা সংকটের কুটনৈতিক সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারকে শাস্তি নয়, চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানের দিকেই নজর যুক্তরাষ্ট্রের।

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ষষ্ঠ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বমূলক সংলাপ শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন।

টমাস শ্যানন জানান, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রর মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রেখেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র যে কোনও সময় যে কোনও ধরনের নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি।

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

এক প্রশ্নে শ্যানন বলেন, “এই মুহূর্তে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান শ্যানন।
যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া এসব পদক্ষেপ সঙ্কট সমাধানে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে, জানতে চাইলে মার্কিন কূটনীতিক শ্যানন বলেন, এসব পদক্ষেপের কারণে সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে। “রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের অনুমতিও পাওয়া গেছে,” বলেন তিনি।

ষষ্ঠ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ অংশীদারিত্ব সংলাপ গত পহেলা নভেম্বর ঢাকায় শুরু হয়। প্রথম দিনে দু’দেশের প্রতিনিধিরা এবারের সংলাপের জন্য আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করেন। পরে তিন দিনের বিরতির পর রোববার চূড়ান্ত সংলাপে অংশ নেন দু’দেশের প্রতিনিধিরা।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে বার্ষিক এই অংশীদারিত্বমূলক সংলাপে মূলত দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় স্থান পায়। তবে এবার আলোচনার বড় একটা অংশ জুড়েই ছিল রোহিঙ্গা সঙ্কট।

প্রেস ব্রিফিংয়ে থমাস শ্যানন বলেন, সংলাপে দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠি, উত্তর কোরিয়ার আচরণ প্রসঙ্গ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট।
এই সংলাপ প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একত্রে কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সেতু, স্থায়িত্ব এবং সমৃদ্ধির স্তম্ভ। একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র।
দায়িত্বশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত অংশীদার পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।

মিয়ানমারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে কি’না জানতে চাইলে শ্যানন বলেন, মিয়ানমারকে শাস্তি নয়, যুক্তরাষ্ট্র চায় রোহিঙ্গা সংকটের সুষ্ঠু সমাধান। আর এ সমাধানের জন্য প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন।
সে লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই ইস্যুতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কাজ করছে সেজন্য ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘শক্ত’ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) মানবিক সহায়তা দিচ্ছে এবং সঙ্কট সমাধানে অন্তত ৩১ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।”