
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
বিমান বন্দরে অবতরণের পর ভিভিআইপি লাউঞ্জে তাকে স্বাগত জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, তিনবাহিনীর প্রধানসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ছিলেন দেশের বিশিষ্ট জনরা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থারে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন দলীয় নেতারা।
এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব মানবতার বাতিঘর ও মানবতার মা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেয়া মানুষেরই কর্তব্য। প্রথমে রোহিঙ্গাদের ঢল নিয়ে সরকার একটু অস্বস্তিতে থাকলেও পরে খোজ নিয়ে জানা গেল মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে। তাই সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এতটা মিয়ানমারের ওপর পড়তোনা।
আমাদেরকে নানাভাবে উস্কানি দেয়া হয়েছে যুদ্ধ জড়ানোর জন্য। সরকার কোন উস্কানিতে কান না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক চাপের কারণে হোক বা যেকোন কারণে হোক মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হওয়ায় দেশটিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের মানুষের মানসিক সমর্থনকে বড় শক্তি বলে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু নিয়ে কথা বলেন। বলেন, যারা দুর্নীতির কথা বলেছিলেন তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পাচ্ছে।
আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারবেনা। সেটিই সত্য হয়েছে। সত্যের জয় হয়েছে। দেশের মানুষের সমর্থন ও ভালবাসার কারণেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু আজকের অবস্থায় আসতে পেরেছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের ভালবাসার চেয়ে বড় কোন প্রাপ্তি একজন রাজনীতিবিদের জীবনে থাকতে পারেনা।
বিমান বন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও শ্রেণী পেশার মানুষ রাজপথে অবস্থান নেন।
প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে রাস্তায় দাঁড়ানোর সময় ও মিছিল নিয়ে আসার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি ব্যবহার করা যাবে না- দলীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্ত থাকলেও তা মানা হয়নি।
দলীয় সিদ্ধান্ন্ত অনুযায়ী কোনো বাদ্যযন্ত্র বা ঢোল ব্যবহার করা যাবে না। সে সিদ্ধান্তও মানা হয়নি।
শেরে বাংলা নগর থানার একটি মিছিলে ব্যান্ডপার্টি, ঢোল বাজিয়ে সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় অবস্থান নেয়। এ মিছিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে শেখ হাসিনা দেশের পথে সোমবার লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছেন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন যোগদান শেষে ২২ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন সফরে যান। ওয়াশিংটনে এক সপ্তাহ অবস্থানের পর ২ অক্টোবর লন্ডন হয়ে তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রীর গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের কারণে তার দেশে ফেরা বিলম্ব হয়।