ধর্ষণের দায়ে ধর্মগুরু রাম রহিমের ২০ বছরের জেল

দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। ভারতজুড়ে টান টান উত্তেজনা আর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হরিয়ানা রাজ্যের রোহতক কারাগারে বিশেষ আদালত বসিয়ে সোমবার এই সাজা ঘোষণা করেন বিচারক জগদীপ সিং।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুই নারীকে ধর্ষণের জন্য ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রাম রহিম সিংকে। দুই সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘রকস্টার বাবা’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই ধর্মগুরুকে মোট ২০ বছর জেল খাটতে হবে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার দুই নারীকে দিতে হবে ১৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ।

আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক সাজা ঘোষণার আগেই অস্থায়ী আদালতের মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম। বার বার তিনি বলছিলেন- “মুঝে মাফ করদো!”

পঞ্জাবের ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান ৫০ বছর বয়সী গুরমিত রাম রহিম সিং বলতে চেষ্টা করেন, আইনের প্রতি তার অগাধ ‘আস্থা’ রয়েছে। তিনি ‘নিরপরাধ’, কিন্তু তাকে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে’।

রাম রহিমের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেছিলেন, এই ধর্মগুরু যেহেতু সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেন, সেটা মাথায় রেখেই রায় দেওয়া উচিৎ। ২০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা ‍দিয়েছেন।

অন্যদিকে ১৫ বছর আগে যে দুই ভক্ত রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের এই অভিযোগ এনেছিলেন, তারাও সাজা বাড়ানোর দাবিতে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বলেছেন।

এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) আসামি রাম রহিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছিল। সিবিআই এরইমধ্যে রাম রহিমের সাজা বাড়ানোর আবেদন করেছে এবং তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এ সংস্থার এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে জানিয়েছে।

বিবিসি বলছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল।


বাবা রাম রহিম নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ডেরা সাচ্চা সওদা নামে যে আশ্রমের নেতৃত্ব দেন, তা শিখ, হিন্দু, মুসলিম-সব ধর্মের চেতনার মিশেলে তৈরি।

ভারতীয় গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে অন্তত পাঁচ লাখ ভক্ত রয়েছে রাম রহিমের। সারা বিশ্বে তার ছয় কোটি ভক্ত বলে দাবি শিষ্যদের।

রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ২০০২ সালে, তার আশ্রমের এক নারী সাধিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেনামী চিঠিতে ওই অভিযোগ করেন। ওই চিঠির ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তে সিবিআইকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

ওই বছরই কথিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।

২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মাথায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। চণ্ডিগড়ের পাঁচকুলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত গত শুক্রবার ওই মামলায় রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যাপক তাণ্ডব শুরু করে এই ধর্মগুরুর আড়াই লাখ ভক্ত। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী দিল্লি পর্যন্ত।

 

Be the first to comment

Leave a Reply